ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোরবানির চেতনায় আত্মশুদ্ধির অভিযাত্রা

প্রদীপ কুমার রায়, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ২০:১৪, ২৩ মে ২০২৫

কোরবানির চেতনায় আত্মশুদ্ধির অভিযাত্রা

ছবি: সংগৃহীত।

আর ক’দিন পরেই আমাদের দ্বারে কড়া নাড়বে পবিত্র ঈদুল আজহা। কেবল উৎসব নয়, এ এক আত্মত্যাগ ও মানবিকতার মহোৎসব। হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর অসীম আনুগত্য, নির্ভেজাল ইমান ও পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের স্মরণে এই দিবস উদ্‌যাপিত হয়। কোরবানির মাধ্যমে মুসলিম হৃদয়ে যে ত্যাগের বীজ বপিত হয়, তা যেন নবজন্ম দেয় একটি পরিশুদ্ধ আত্মার, একটি মানবিক সমাজের।

বর্তমানে আমরা যে সংকটকাল অতিক্রম করছি-হিংসা, বিদ্বেষ, আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা-তার বিপরীতে ঈদুল আজহার আহ্বান এক নির্মল আকাশের মতো। এই সময়ে, আমাদের করণীয় কী? কী করলে আমরা এই মহোৎসবকে কেবল গরু বা ছাগল কোরবানির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আত্মিক উচ্চতায় উন্নীত করতে পারি?

সাহিত্য ও ধর্মের দৃষ্টিতে বলা যায়, সর্বপ্রথম আমাদের কোরবানি হওয়া উচিত অহংকার, লোভ, হিংসা ও অপবিত্র চিন্তার। মহান আল্লাহ বলেন, “তোমাদের কোরবানির মাংস বা রক্ত তাঁর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে শুধু তোমাদের তাকওয়া।” এই তাকওয়ার আলোয় হৃদয় প্রজ্বলিত হোক। প্রতিবেশীর ক্ষুধা, আত্মীয়ের দুঃখ, সমাজের নিপীড়িত মানুষের কান্না-এসব আমাদের কোরবানির পূর্ণতা নির্ধারণ করে।

আমরা যারা কলম চালাই, যারা সমাজের কথা তুলে ধরি, তাদের কোরবানিও কম নয়। সত্য বলার সাহস, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম চালানো, নিপীড়িতের পাশে দাঁড়ানো-এই সবই ঈদুল আজহার অন্তর্নিহিত শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগ। আমার দর্পণের এই বিশেষ সংখ্যায় যারা অংশ নিচ্ছেন, তারা যেন হয়ে উঠেন একেকজন চিন্তার ইব্রাহিম, যারা যুগের সংকটকালেও মানবতা ও সাহিত্যের কোরবানি দিতে জানেন।

এই ঈদে, আমরা যেন শুধু মাত্র পশু নয়, বরং আমাদের অন্তরের পশুত্বও বিসর্জন দেই। হিংসার বদলে দেই ভালোবাসা, বিদ্বেষের বদলে মানবতা, আত্মপ্রবঞ্চনার বদলে আত্মসচেতনতা। তবেই কোরবানির রক্ত আমাদের রক্তে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটাবে।

পবিত্র ঈদুল আজহার এই মাহেন্দ্রক্ষণে, আমার প্রিয় পত্রিকা দৈনিক জনকণ্ঠের পাঠক, লেখক ও সম্পাদকমণ্ডলী সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন। আসুন, আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলি একটি নির্মল, উদার ও সহমর্মিতাপূর্ণ সমাজ-এই হোক আমাদের কোরবানির আসল ফসল।

মিরাজ খান

×