
ছবি: সংগৃহীত
আমাদের সবার জীবনে কিছু স্মৃতি থাকে, যেগুলো সময়-সময়ে ফিরে আসে—পুরনো কোনো গান শুনে, ছবি দেখলে বা হঠাৎ পরিচিত কোনো গন্ধে। সেই স্মৃতিগুলো কখনো স্কুলজীবনের, কখনো প্রথম প্রেমের, কখনো হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তের। এগুলোই ‘নস্টালজিয়া’—স্মৃতিমেদুরতায় মোড়া পুরনো দিনের মধুর অনুভূতি।
কিন্তু এই স্মৃতিগুলোর আবেগ কি কেবল মধুর থাকে? নাকি সময়ের সঙ্গে সেগুলো রূপ বদলায়?
সম্প্রতি এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, নস্টালজিক স্মৃতিগুলো সময়ের সঙ্গে হয়ে ওঠে আরও মিশ্র—অর্থাৎ এতে বাড়ে দুঃখের রং, আর কমে আনন্দের দীপ্তি।
সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী টিম ওয়াইল্ডশুটের নেতৃত্বে চালানো এই গবেষণায় দেখা যায়, পুরনো প্রিয় স্মৃতিগুলো মনে পড়ার সময় যত দূরে সরে যায়, ততই তাতে একাকিত্ব ও আফসোসের অনুভূতি প্রবল হয়। গবেষকরা একে বলছেন “নস্টালজিয়ার আবেগীয় পরিবর্তন”।
গবেষণায় কী ছিল?
গবেষকরা দুইটি ভিন্ন পরীক্ষায় মোট ৩৯৬ জন অংশগ্রহণকারীর উপর গবেষণা চালান। একদলকে বলা হয় তাদের জীবনের কোনো নস্টালজিক মুহূর্ত স্মরণ করতে, আর অন্যদলকে সাধারণ কোনো ঘটনা।
প্রথমে তারা স্মৃতির মুহূর্তে কেমন অনুভব করেছিলেন, আর বর্তমানে তা মনে হলে কী অনুভব করছেন—তা জানাতে বলা হয়।
ফলাফল বলছে:
নস্টালজিক স্মৃতিগুলোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক আবেগ কমেছে,
নেতিবাচক আবেগ বেড়েছে,
বিশেষ করে পশ্চাৎপরতা (regret) ও একাকিত্ব (loneliness) বেড়েছে,
যদিও কৃতজ্ঞতা (gratitude) নামক একটি আবেগ সময়ের সঙ্গে বাড়তে দেখা গেছে।
গবেষকেরা মনে করেন, এই আবেগের পরিবর্তন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মপরিচয় গঠনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, স্মৃতির সঙ্গে আমরা যখন বারবার আবেগ জড়াই, তখন তার অর্থও বদলাতে থাকে। হয়তো যা একসময় ছিল আনন্দের, এখন তা মনে হলে মনে পড়ে—“ইশ, যদি তখন আরও সময় দিতাম”, বা “এখন সে নেই, তখন বুঝিনি কতটা মূল্যবান ছিল…”
এই আবেগগুলোই নস্টালজিয়াকে করে তোলে বিষণ্ণ আনন্দের এক অনন্য অনুভব।
নস্টালজিয়া শুধু সুখের নয়, তাতে লুকিয়ে থাকে দুঃখও। কিন্তু এই দ্বৈত আবেগই আমাদের করে তোলে মানুষ—সংবেদনশীল, চিন্তাশীল, আত্মসমালোচক।
তাই, পুরনো দিনের কথা মনে হলে কাঁদলেও, হাসলেও—তা আমাদের ভিতরের জগতকে আরও একটু রঙিন করে তোলে। সময়ের সঙ্গে স্মৃতির এই আবেগ-ভ্রমণও হয়তো জীবনেরই এক অনুপম শিক্ষা।
এসএফ