ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মাত্র ৬০ সেকেন্ডেই ঘুম! মিলিটারি এই কৌশলে ঘুম আসবে চোখের পলকে

প্রকাশিত: ০২:৫৬, ২৪ মে ২০২৫

মাত্র ৬০ সেকেন্ডেই ঘুম! মিলিটারি এই কৌশলে ঘুম আসবে চোখের পলকে

ঘুমের সমস্যা কি নিয়মিত ভোগাচ্ছে আপনাকে? বিছানায় যাওয়ার পর দীর্ঘক্ষণ ঘুম না আসা, অস্থিরতা, ক্লান্তি আর চিন্তার ঘূর্ণি সব মিলিয়ে অনেকেই ঘুমানোর চেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতেই বেশি সময় কাটিয়ে দেন। অথচ, গবেষণা বলছে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে তা শরীর ও মনের ওপর ফেলতে পারে ভয়াবহ প্রভাব।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ঘুমের ঘাটতিতে ভোগেন। বয়স ভেদে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হলেও বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। আর এই ঘুম না হলে দেখা দিতে পারে ক্লান্তি, অমনোযোগিতা, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়া, উদ্বেগ-অবসাদের ঝুঁকি এমনকি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতার মতো জটিল শারীরিক সমস্যা।

তবে আশার কথা হলো, ঘুমের সমস্যায় না গিয়ে বরং কিছু কার্যকর পদ্ধতিতে ঘুম সহজ করে তোলা সম্ভব। আজ এমনই দুটি বিজ্ঞানসম্মত ও বহুল চর্চিত পদ্ধতির কথা জানানো হলো, যেগুলোর একটি ব্যবহার করে মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধক্ষেত্রেও মাত্র এক মিনিটেই ঘুমিয়ে পড়েন।

মিলিটারি মেথড: সেনা কৌশলে ঘুম
একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ঘুমের পরিচর্যা, ধীর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং দেহ শিথিল করার অনুশীলন অনেক সময় ওষুধের চেয়েও বেশি কার্যকর হতে পারে। নিচে দেওয়া দুটো পদ্ধতি মূলত শ্বাস-প্রশ্বাস ও মাংসপেশি শিথিল করে মস্তিষ্ককে শান্ত করে তোলে, যা দ্রুত ঘুম আসতে সাহায্য করে।

৪-৭-৮ শ্বাসপ্রশ্বাস কৌশল
বিশ্বখ্যাত চিকিৎসক ড. অ্যান্ড্রু ওয়েইল এই পদ্ধতির প্রচলন করেন। এটি যোগবিদ্যায় ব্যবহৃত ‘প্রণায়ামা’ শ্বাসব্যায়ামের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে এটি ঘুম আনতে অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

তবে যদি অ্যাজমা বা ফুসফুসজনিত কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

পদ্ধতি:
১. জিভের আগা উপরের পাটির সামনের দাঁতের পেছনে ছুঁইয়ে রাখুন।
২. ঠোঁট আলতো করে খুলে মুখ দিয়ে শোঁ শোঁ শব্দ করে নিশ্বাস ছাড়ুন।
৩. এবার নাক দিয়ে ধীরে নিশ্বাস নিন এবং মনে মনে ৪ পর্যন্ত গুনুন।
৪. নিঃশ্বাস ধরে রাখুন ৭ সেকেন্ড।
৫. মুখ দিয়ে আবার শোঁ শোঁ শব্দ করে নিশ্বাস ছাড়ুন ৮ সেকেন্ড ধরে।
৬. এটিই একটি পূর্ণ চক্র। এমন চারটি চক্র সম্পন্ন করুন।

শরীর যদি তার আগেই শান্ত হয়ে আসে, তাহলে অনুশীলন না শেষ করলেও সমস্যা নেই। ঘুম আসতে দিন।

প্রগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন (PMR)
‘গভীর পেশি শিথিলকরণ’ নামে পরিচিত এই কৌশলও ঘুমের ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর। এটি এমন একটি অনুশীলন, যেখানে পেশিগুলো কিছুটা টান দিয়ে আবার শিথিল করা হয়। এই টান-ছাড় শরীর ও মনকে একসঙ্গে শান্ত করে।

৪-৭-৮ শ্বাসপ্রশ্বাস পদ্ধতির সাথে মিলিয়ে নিচের অনুশীলন অনুসরণ করুন:

রিলাক্সেশন ধাপ:
১. ভ্রু যতটা সম্ভব ওপরে তুলুন, ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
২. হঠাৎ ছেড়ে দিন। ১০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন।
৩. চওড়া করে হাসুন, গালে চাপ পড়ুক। ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ছেড়ে দিন।
৪. চোখ শক্ত করে বন্ধ করুন, ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। শিথিল করুন।
৫. মাথা সামান্য পিছনে হেলিয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকান। ৫ সেকেন্ড ধরে রেখে আবার শিথিল করুন।
৬. এবার ধীরে ধীরে নিচের দিকে এগোন বাহু, বুক, উরু, পা পর্যন্ত।
৭. সব পেশিতে টান-ছাড় প্রক্রিয়া চালিয়ে যান যতক্ষণ না ঘুম আসে। পুরোটা শেষ করতেই হবে এমন নয়।

এই কৌশল অনুসরণ করতে করতে নিজের শরীরকে অনুভব করুন কতটা ভারী আর নিস্তব্ধ মনে হচ্ছে। এটাই ঘুম আসার ইঙ্গিত।


ঘুম আসছে না, ঘুমের ওষুধ খাওয়ার চিন্তা করছেন তার আগে একবার এই মিলিটারি কৌশল দুটো মেনে চলুন। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই শুধু শ্বাস ও পেশি শিথিল করে ঘুমিয়ে পড়া সম্ভব। নিয়মিত চর্চায় আপনি নিজেই দেখে নেবেন পরিবর্তন।

পর্যাপ্ত ঘুম মানে শুধু বিশ্রাম নয়, বরং এটি আপনার মানসিক সুস্থতা, স্মৃতিশক্তি এবং দৈনন্দিন পারফরম্যান্সের অপরিহার্য ভিত্তি। তাই এবার থেকে ঘুমকে দিন গুরুত্ব, আর প্রয়োগ করুন কার্যকর এই পদ্ধতিগুলো।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/5n9bh2t3

আফরোজা

×