
ছবিঃ সংগৃহীত
সন্তান জন্ম জীবনের এক অমূল্য আনন্দ, কিন্তু এ আনন্দের মাঝেই অনেক দাম্পত্য সম্পর্ক হারিয়ে ফেলে আগের উষ্ণতা। বিশেষ করে আমাদের সমাজে এক বা একাধিক সন্তানের জন্মের পর অনেক দম্পতির সম্পর্ক ভাইবোনের মতো হয়ে পড়ে—যেখানে রোমান্সের জায়গা নিয়ে নেয় দায়িত্ব, ক্লান্তি আর তিক্ততা।
এ বাস্তবতা স্বীকার করেই পারিবারিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর জন্মের পর পরিণত ভালোবাসার জায়গাটি অনেক সময়েই স্থানচ্যুত হয়ে পড়ে শারীরিক-মানসিক ক্লান্তি এবং সামাজিক রীতিনীতির কারণে।
বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ‘বাচ্চা নিয়ে ঘুমানো’ অভ্যাস
দেশীয় সংস্কৃতিতে বাচ্চা মা-বাবার মাঝখানে ঘুমানো যেন এক অনিবার্য বিষয়। পাঁচ, ছয় এমনকি সাত বছর বয়স পর্যন্তও অনেক শিশু মা-বাবার বিছানায় থাকে। অথচ মনোবিজ্ঞান বলছে, বাচ্চা আড়াই বা তিন বছর বয়স পেরোলেই তাকে আলাদা ঘুমানোর অভ্যাস করানো উচিত।
কারণ, এই বয়সে শিশু অনেক কিছুই বুঝতে শুরু করে। মা-বাবার প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপ যেমন তার মানসিক বিকাশে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে, তেমনি দম্পতির মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
✅ শিশুকে আলাদা ঘুমানোর অভ্যাস করানো জরুরি
শিশুকে আলাদা ঘুমানোর জন্য তার পছন্দের মতো করে রুম সাজান। গল্প শোনাতে শোনাতে বা বই পড়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে নিজ ঘরে ফিরে আসুন। রাতে জেগে উঠলে যাতে দ্রুত সাড়া দিতে পারেন, সেজন্য ব্যবহার করতে পারেন বেবি মনিটর। সকালে ঘুম ভাঙার আগেই শিশুর পাশে গেলে সে বুঝতেই পারবে না আপনি সারা রাত তার পাশে ছিলেন না।
❗ দ্বিতীয় সন্তান এলে প্রথম সন্তানের প্রতি মনোযোগ কমে যায়
আরেকটি বড় সমস্যা হয় দ্বিতীয় সন্তান আসার পর। তখন অনেক মায়েরাই পুরো মনোযোগ ছোট সন্তানের দিকে কেন্দ্রীভূত করেন, আর বড় সন্তান হয়ে পড়ে উপেক্ষিত। আদরের অভাব, বারবার বকা—সব মিলে বড় সন্তানের মনে জন্ম নেয় হিংসা, রাগ আর এক ধরনের প্রত্যাখ্যানের বেদনা।
এ সময় সবচেয়ে বেশি দরকার হয় বড় সন্তানকে বেশি করে ভালোবাসা দেখানো, বোঝানো যে তার জায়গা এখনও একইরকম। এটা শুধুই মায়ের নয়, বাবারও দায়িত্ব।
🚫 তুলনা নয়, সমতা চর্চা করুন
দুই সন্তানের মধ্যে তুলনা করা বা আলাদা নিয়ম চালু করা থেকে বিরত থাকুন। একজনকে মোবাইল দিয়ে খাওয়ানো, অন্যজনকে নিষেধ করা—এতে শিশুদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। নিয়ম হওয়া উচিত এক ও অভিন্ন।
👨👩👧👦 পারিবারিক সময় দিনভর ব্যস্ততায় হারিয়ে যায়
তাই দিনে অন্তত এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরিবার-ভিত্তিক সময় নির্ধারিত রাখুন। একসাথে খেলুন, গল্প বলুন, হাসুন। পার্টনারকে দিন ভালোবাসার দৃষ্টি, স্পর্শ এবং সময়। মেজাজ খারাপ থাকলে প্রিয় মানুষগুলোর সামনে রাগ না ঝাড়ার অনুশীলন করুন। সরে যান, গভীর নিঃশ্বাস নিন, ভাবুন—আপনার রাগের কারণ কতটা যৌক্তিক।
💌 ভালোবাসার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা দায়িত্ব
স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান—এই ত্রয়ী মিলে তৈরি হয় একটি পরিবার। সংসারের কাজ করতে গিয়ে যেন এই মানুষগুলো একে অপরকে হারিয়ে না ফেলেন। ভালোবাসা, যত্ন আর বোঝাপড়ার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠুক দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ভিত্তি।
পরিবার মানেই কেবল দায়িত্ব নয়, ভালোবাসা ও বন্ধনের এক চলমান যাত্রা। এই যাত্রাকে আনন্দময় রাখাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
ইমরান