
ছবিঃ সংগৃহীত
দীর্ঘদিনের জটিলতা ও বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পৈতৃক সম্পত্তির ভাগাভাগির নিয়মে। সরকার এখন থেকে বাধ্যতামূলক করেছে রেজিস্ট্রিকৃত আপোষ বন্টননামা দলিল—যা ছাড়া কোনো উত্তরাধিকার সম্পত্তির নামজারি, খাজনা প্রদান কিংবা বিক্রয় কার্যক্রম সম্ভব নয়।
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরে ভাই-বোনদের মধ্যে বিরোধ, প্রতারণা এবং অনিয়মের ঘটনা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পিতামাতার, ভাইয়ের বা দাদার রেখে যাওয়া জমি নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে এক ভাই অন্য ভাইকে জমি বঞ্চিত করেন, বোনদের অংশ না দিয়ে সম্পত্তি আত্মসাৎ করেন, যা পরবর্তীতে দেওয়ানি আদালতে মামলায় রূপ নেয়।
২০০৪ সালে সরকার আপোষ বন্টননামা দলিল বাধ্যতামূলক করলেও বাস্তবায়নে কার্যকর ফল আসেনি। যার যার ইচ্ছেমতো জমি দখল করে নিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা রেজিস্ট্রার অফিসে নথিভুক্ত হয়নি। ফলে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে এবং ওয়ারিশরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমির মালিক যদি মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁর রেখে যাওয়া ওয়ারিশরা যদি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পত্তি ভাগ না করে, তাহলে সেই জমি আইনত অবিভক্ত থেকে যায়। এই অবস্থায় কেউ যদি নিজের নামে জমি নামজারি বা রেকর্ড করেও থাকেন, তাহলে অন্য ওয়ারিশ তা চ্যালেঞ্জ করে সহজেই আদালতে সেই নামজারি বাতিল করতে পারেন—even ২০ বা ৩০ বছর পরেও।
এই সমস্যা সমাধানে সরকার ২০২৩ সালে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ পাশ করে এবং তার বিধিমালা প্রকাশ করে। এই আইনে বলা হয়েছে, যেকোনো ওয়ারিশ যদি অপর ওয়ারিশদের প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত করে, তবে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। অপরাধ প্রমাণ হলে আদালত সেই বন্টন বাতিল করে দিতে পারবে।
বর্তমানে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে: আপোষ বন্টননামা দলিল ছাড়া কোনো নামজারি বা বিক্রয় সম্পাদন করা যাবে না। এমনকি খাজনা দিতেও সম্পূর্ণ বন্টননামা দলিল দেখাতে হচ্ছে।
যারা এই নিয়ম মানতে চান না, বা একটি অংশ এতে রাজি না হলে, বাকিরা ফারায়েজ মোতাবেক আদালতের মাধ্যমে নিজেদের হিস্যা আদায় করতে পারবেন। তবে এতে দীর্ঘ সময় ও খরচের ঝুঁকি থাকায় সরকার সকলকে আপোষ বন্টননামার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে বন্টন সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে।
আইনজীবীরা বলছেন, যে কেউ যদি আপোষ বন্টননামা দলিল ছাড়া জমি কেনেন, তাহলে ভবিষ্যতে সেই সম্পত্তি হারানোর সম্ভাবনা থেকে যায়। তদুপরি, দান, হস্তান্তর বা বেচাকেনা করলেও এই দলিল ছাড়া তা আইনি বৈধতা পাবে না।
নতুন আইনি বিধিমালার ফলে জমি সংক্রান্ত প্রতারণা ও অনিয়মে লাগাম টানার উদ্যোগে সরকার আরও কঠোর হয়েছে। জনসাধারণকে এখন থেকে সাবধানতা অবলম্বন করে সম্পত্তির ব্যাপারে আইনি পদ্ধতি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মারিয়া