ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কি কারণে A, B, C নয়, Q, W, E দিয়ে শুরু হয় কীবোর্ড? জানুন চমকপ্রদ কারণ!

মো. আতিকুর রহমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ০১:২৪, ২৪ মে ২০২৫; আপডেট: ০১:২৯, ২৪ মে ২০২৫

কি কারণে A, B, C নয়, Q, W, E দিয়ে শুরু হয় কীবোর্ড? জানুন চমকপ্রদ কারণ!

আমরা প্রতিদিন কম্পিউটার কিংবা মোবাইলে টাইপ করি কখনো কাজের প্রয়োজনে, কখনো লেখালেখিতে, কখনোবা স্কুল-কলেজের প্রজেক্টে বা বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাটে। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, কীবোর্ডের অক্ষরগুলো কেন A, B, C দিয়ে শুরু না হয়ে Q, W, E, R, T, Y দিয়ে শুরু হয়? এই ‘এলোমেলো’ বিন্যাস কি নিছক কাকতালীয়? মোটেই না এর পেছনে রয়েছে প্রযুক্তির এক গভীর কৌশল এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।

এই রহস্যের জবাব খুঁজতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৮৭০ সালে। সেই সময় মার্কিন উদ্ভাবক ক্রিস্টোফার ল্যাথাম শোলেস তৈরি করেন প্রথম ব্যবহারযোগ্য টাইপরাইটার — Remington Model 1। প্রাথমিকভাবে এতে অক্ষরগুলো ছিল সাধারণ বর্ণানুক্রমে সাজানো। কিন্তু দ্রুত টাইপের সময় দেখা গেল, টাইপরাইটারের ধাতব রডগুলো একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আটকে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ টাইপ করা হচ্ছিল ধীর গতিতে এবং ব্যবহারকারীদের ভোগান্তি বাড়ছিল।

এই সমস্যা সমাধানে শোলেস সহায়তা নেন তাঁর সহকর্মী কার্লোস গ্লিডেন এবং শিক্ষাবিদ আমোস ডেন্সমোর। তাঁরা গবেষণা করে দেখেন  যেসব অক্ষর দ্রুত ও ঘনঘন ব্যবহৃত হয়, সেগুলো কাছাকাছি থাকলেই রডগুলোর সংঘর্ষ ঘটে। তাই তাঁরা অক্ষরগুলোর এমন এক নতুন বিন্যাস দাঁড় করান, যেখানে ঘনঘন ব্যবহৃত অক্ষরগুলো দূরে দূরে থাকে। এই পরিবর্তিত বিন্যাসই আজকের QWERTY কীবোর্ড।

১৮৭৮ সালে QWERTY বিন্যাসের পেটেন্ট হয়। এরপর Remington Model 2 টাইপরাইটারে এটি ব্যবহৃত হয়, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। টাইপিস্টরা এই বিন্যাসেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।

পরবর্তীতে যখন কম্পিউটারের আবির্ভাব ঘটে, তখন কীবোর্ড নির্মাতারা পুরনো ব্যবহারকারীদের অভ্যাসের কথা বিবেচনায় রেখে QWERTY-ই রেখে দেন। কারণ, নতুন বিন্যাস মানেই কোটি কোটি ব্যবহারকারীর অভ্যাস বদলানো  যা বাস্তবতায় প্রায় অসম্ভব ছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে Dvorak বা Colemak নামের কিছু বিকল্প কীবোর্ড বাজারে আসে, QWERTY-ই থেকে যায় সর্বজনীন মানদণ্ড।

আজকের দিনে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ এমনকি স্মার্টফোনেও আমরা যে কীবোর্ড ব্যবহার করি, সেটি সেই দেড়শো বছর আগের সমাধান থেকেই এসেছে। প্রথম দর্শনে এলোমেলো মনে হলেও, এর পেছনে রয়েছে প্রযুক্তির সূক্ষ্ম এক জটিলতা আর সমস্যা সমাধানের দৃষ্টান্তমূলক প্রয়াস। টাইপরাইটারের যান্ত্রিক সীমাবদ্ধতা দূর করতে গিয়ে তৈরি করা এই কৌশল আজও সময়কে ছাড়িয়ে বহাল তবিয়তে টিকে আছে  প্রযুক্তির ইতিহাসে যা এক বিরল উদাহরণ।
 

মিমিয়া

×