ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জেনে রাখুন বাড়ির মালিক "বাসা ভাড়া" নিয়ে ঝামেলা করলে কী করবেন?

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ২৩ মে ২০২৫

জেনে রাখুন বাড়ির মালিক

মাস শেষে বেতনের বড় অংশ বাড়িওয়ালার হাতে তুলে দেওয়ার পরও ভাড়াটিয়াদের স্বস্তি মেলে না। নানা অজুহাতে ভাড়া বাড়ানো, সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া এবং যখন তখন উচ্ছেদের হুমকির মুখে পড়তে হয়। অথচ, আপনি কি জানেন, ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ভাড়াটে হিসেবে আপনারও কিছু অধিকার রয়েছে? এই অধিকার লঙ্ঘন করলে বাড়িওয়ালাকেও শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি, ভাড়া সংক্রান্ত সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য ভাড়ানিয়ন্ত্রক (সাধারণত জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালত) দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

বাসা বা অফিস ভাড়া নেওয়ার আগে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে কিছু বিষয় স্পষ্ট করে নিলে ভবিষ্যতে অনেক সমস্যা এড়ানো যায় এবং আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।


নতুন বাড়ি ভাড়া আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো:

  • অগ্রিম ভাড়া: বাড়িওয়ালা তার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে এক মাসের বেশি অগ্রিম জামানত নিতে পারবেন না।
  • ভাড়া বৃদ্ধি: নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর হওয়ার পর দুই বছর পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো যাবে না
  • ভাড়ার রশিদ: ভাড়া আদায়ের পর বাড়িওয়ালা অবশ্যই ভাড়াটিয়াকে রসিদ দিতে বাধ্য। রসিদ দিতে ব্যর্থ হলে বাড়িওয়ালাকে আদায়কৃত টাকার দ্বিগুণ অর্থদণ্ড দিতে হবে।
  • বার্ষিক ভাড়া সীমা: ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজার মূল্যের শতকরা ১৫ ভাগের বেশি হবে না
  • বাসযোগ্য পরিবেশ: বাড়ি মালিক আইনত বাধ্য তার বাড়িটিকে স্বাস্থ্যসম্মত ও বসবাসের উপযোগী রাখতে।
  • উচ্ছেদ সুরক্ষা: ভাড়াটিয়া যদি নিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করেন এবং চুক্তির শর্ত মেনে চলেন, তাহলে তাকে সহজে উচ্ছেদ করা যাবে না। মাসিক ভাড়ায় থাকলে যুক্তিসঙ্গত কারণে উচ্ছেদ করতে চাইলে ১৫ দিন আগে নোটিশ দিতে হবে। চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বাড়িওয়ালা ভাড়া নিলে ধরে নেওয়া হবে চুক্তি নবায়ন হয়েছে।

ভাড়া নেওয়ার আগে যা করবেন:

  • লিখিত চুক্তি: বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে একটি লিখিত চুক্তিনামা সই করুন। এতে চুক্তির মেয়াদ, উভয় পক্ষের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ভাড়ার পরিমাণ, পরিশোধের তারিখ এবং অন্যান্য সেবার চার্জ উল্লেখ থাকবে। জামানতের বিষয়টিও স্পষ্ট করে নিন। এই চুক্তি ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে করতে হবে।
  • মিটার রিডিং ও চাবি: নতুন বাসায় ওঠার আগে বিদ্যুতের মিটার রিডিং এবং মূল গেটের চাবি বুঝে নিন।
  • পরিবেশ সম্পর্কে জানুন: গিজার, পানির মিটার, ইলেকট্রিক লাইন, গ্যাস, ময়লা ফেলার ব্যবস্থা, দারোয়ান ইত্যাদি সম্পর্কে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে আগে থেকেই জেনে নিন। আশপাশের পরিবেশ সম্পর্কে অবহিত করা বাড়িওয়ালার দায়িত্ব।
  • মেরামত: বাড়িওয়ালা বাড়ি মেরামত করতে বাধ্য। যদি তিনি মেরামত না করেন, তাহলে ভাড়াটে ভাড়ানিয়ন্ত্রকের কাছে আবেদন করতে পারেন। জরুরি প্রয়োজনে ভাড়াটে নিজেও মেরামত করে ভাড়ার টাকা থেকে খরচ সমন্বয় করতে পারবেন, তবে এক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

এই বিষয়গুলো মেনে চললে আপনার বাড়িভাড়া সংক্রান্ত আতঙ্ক অনেকটাই কমবে এবং আপনি আপনার অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারবেন।

সাব্বির

×