
গাউট রোগ—এক ধরনের জ্বালা-পোড়া ও ব্যথার রোগ যা সাধারণত কাঁধ, হাঁটু, পা ও আঙ্গুলের জয়েন্টে দেখা যায়। অনেকেই গাউটকে বোঝেন বেশি মদ্যপান বা খারাপ খাদ্যাভাসের ফল হিসেবে। কিন্তু নতুন এক বিশাল গবেষণায় দেখা গেছে, গাউটের পেছনে জেনেটিক অর্থাৎ বংশগত কারণ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণার মূল তথ্য
নিউ জিল্যান্ডের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টনি মেরিম্যান নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল ২.৬ মিলিয়ন মানুষের ডিএনএ তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এর মধ্যে ছিলো ১২০,২৯৫ জন গাউট রোগী। গবেষণায় তারা ৩৭৭ টি নির্দিষ্ট ডিএনএ এলাকায় পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন যা গাউট রোগের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত, যার মধ্যে ১৪৯ টি এলাকা আগে কখনো গাউটের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি।
লাইফস্টাইল নয়, জেনেটিক কারণেই গাউট
গবেষকরা বলছেন, যদিও জীবনধারা ও পরিবেশের প্রভাব থাকে, গাউটের জন্য সবচেয়ে বড় কারণ হলো বংশগত গুণ। গাউট হয় তখন যখন রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায় এবং তা ছোট ছোট ক্রিস্টালের মতো জমে যায়। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন সেসব ক্রিস্টাল আক্রমণ করে, তখন প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়।
ভুল ধারণা বন্ধ করা জরুরি
মেরিম্যান বলেন, “গাউট রোগী ব্যক্তির কোনো দোষ নয়। এই ভুল ধারণা গাউট জীবনযাত্রার ভুলের ফল, এটি ভাঙতে হবে।” এই ভুল ধারণা অনেক রোগীকে চিকিৎসা নিতে বাধা দেয়, যার ফলে তারা অসহায় অবস্থায় দমনশীলভাবে ব্যথা সহ্য করেন।
চিকিৎসা ও ভবিষ্যৎ দিশা
এই গবেষণা গাউটের চিকিৎসায় নতুন পথ খুলে দিয়েছে। বিশেষ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিভাবে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে, তা বোঝার মাধ্যমে নতুন ওষুধ তৈরির সম্ভাবনা বেড়েছে। এমনকি বর্তমান কিছু ওষুধকে পুনরায় ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।
সীমাবদ্ধতাও রয়েছে
গবেষণায় বেশিরভাগ তথ্য ছিলো ইউরোপীয় বংশোদ্ভুত মানুষের, এবং অনেক ক্ষেত্রেই রোগীরা নিজেরাই গাউট আছে বলে জানিয়েছিলেন, যা ক্লিনিক্যালভাবে নিশ্চিত নয়। তবে এর পরেও এটি গাউট রোগ সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে আরও উন্নত ও সহজলভ্য চিকিৎসা পাওয়া যাবে, যা গাউট রোগীদের জীবনমান বদলে দেবে। মেরিম্যান বলেন, “গাউট রোগের প্রতি আমাদের স্বাস্থ্যখাতের মনোযোগ ও অর্থায়ন বাড়ানো উচিত।”
গাউট নিয়ে এখন আর ভুল ধারণায় আটকে থাকা যাবে না। এটা শুধুমাত্র জীবনধারার ফল নয়, বরং জিনের খেলাও রয়েছে। সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতার মাধ্যমে গাউট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
সূত্র : https://www.sciencealert.com/huge-study-reveals-where-gout-comes-from-and-its-not-what-we-thought
মিমিয়া