ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গবেষণায় ধোঁকা! লাল মাংস কতটা নিরাপদ, জানেন কি আসল ঘটনা?

প্রকাশিত: ২১:০১, ২৩ মে ২০২৫

গবেষণায় ধোঁকা! লাল মাংস কতটা নিরাপদ, জানেন কি আসল ঘটনা?

হার্টের রোগ এবং লাল মাংসের সম্পর্ক নিয়ে নতুন এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। সম্প্রতি আমেরিকার একটি বিখ্যাত পুষ্টি জার্নালে প্রকাশিত এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, যেসব গবেষণা লাল মাংস শিল্পের অর্থায়নে হয়েছে, সেগুলোতে লাল মাংসকে কম ক্ষতিকর বা স্বাস্থ্যসম্মত দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে, স্বাধীনভাবে বা সরকারি অনুদানে হওয়া গবেষণাগুলোতে লাল মাংসের ক্ষতিকর প্রভাব বেশি উঠে এসেছে।

এই তথ্যটি আমাদের বোঝাতে চায় যে, গবেষণার ফলাফল কখনো কখনো নির্ভর করে কে অর্থায়ন করছে, অর্থাৎ গবেষণার পেছনে আর্থিক স্বার্থ থাকলে ফলাফল বৈজ্ঞানিক বাস্তবতার থেকে ভিন্ন হতে পারে।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন স্পেনের ফ্রান্সিসকো দে ভিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ মিগুয়েল লোপেজ মোরেনো। তিনি বলেন, "প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন বেকন ও সসেজের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা স্পষ্ট, কিন্তু অপরিষ্কৃত লাল মাংস যেমন গরুর মাংস বা শূকরের মাংস নিয়ে তথ্য এখনো অমীমাংসিত।"

এই পর্যালোচনায় ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকাশিত ৪৪টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্যে ২৯টি গবেষণায় লাল মাংস শিল্প থেকে অর্থায়ন পাওয়া যায়। এই গবেষণাগুলোতে লাল মাংসের ক্ষতিকর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম প্রকাশ পায়। অন্যদিকে ১৫টি স্বাধীন গবেষণায় লাল মাংসের প্রভাব ‘ক্ষতিকর বা নিরপেক্ষ’ হিসেবে দেখা গেছে।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সহকারী অধ্যাপক ডিরড্রে টোবিয়াস বলেন, "যখন এক বিষয় নিয়ে এত ভিন্নমত থাকে, তখন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না কী বিশ্বাস করবে। এটি পুষ্টি বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের আস্থা কমায়।"

তিনি আরো বলেন, অনেক গবেষণায় লাল মাংসকে এমন খাবারের সাথে তুলনা করা হয় যা হৃদয়ের জন্য সুস্থকর, যেমন মুরগি বা মাছ। কিন্তু তুলনা করা হয় না শস্য বা উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের সাথে, যা হৃদরোগ রোধে ভালো।

জাতীয় কেটলমেনস বিফ অ্যাসোসিয়েশনের এক মুখপাত্র জানান, "গরুর মাংস চাষীরা বৈজ্ঞানিক গবেষণার মান বজায় রাখে এবং প্রাণী ও উদ্ভিজ্জ উভয় ধরনের প্রোটিনই স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অংশ হতে পারে।"

তবে পুষ্টিবিদরা বলেন, যতক্ষণ না বড় এবং দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত উদ্ভিজ্জ প্রোটিন হৃদয়-স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী বলে মনে করা হয়।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন ইওন্নিদিস বলেন, "যে কোনো খাদ্য শিল্প যখন গবেষণার অর্থায়ন করে, উদ্দেশ্য থাকে তাদের পণ্য প্রচার করা।" তিনি যোগ করেন, জাতীয় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান (NIH)-এর বাজেট কমানোর ফলে শিল্পের নিয়ন্ত্রণে গবেষণা বাড়তে পারে, যা পুষ্টি বিজ্ঞানের বিশ্বাসযোগ্যতায় ক্ষতিসাধন করবে।

অন্যদিকে, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ মেরিয়ন নেস্টলে বলেন, "খাদ্য শিল্পের অর্থায়নে গবেষণা বিজ্ঞানের জন্য ভালো না হলেও পণ্যের মার্কেটিংয়ের জন্য ভাল।"

এই ধরনের তথ্য তুলে ধরার মাধ্যমে আমাদের জানা দরকার, খাদ্য সংক্রান্ত গবেষণা কখনো কখনো আর্থিক স্বার্থের কারণে বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ার ক্ষেত্রে সবসময় নিরপেক্ষ ও বৈজ্ঞানিক তথ্যের ওপর নির্ভর করা উচিত।

লাল মাংসের ওপর গবেষণা অনেক সময় অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী ভিন্ন ফলাফল দেখায়। স্বাধীন গবেষণাগুলোতে লাল মাংসের ক্ষতিকর প্রভাব বেশি পাওয়া গেছে। তাই লাল মাংস খাওয়ার বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা জরুরি।

সূত্র: https://www.nytimes.com/2025/05/20/well/eat/red-meat-heart-health.html

মিমিয়া

×