
মানবদেহের জটিলতম অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি মূত্রাশয়। অনেক ক্ষেত্রেই মূত্রাশয়ের সমস্যা হলে জীবনযাত্রায় ব্যাপক অস্বস্তি তৈরি হয়। এবার চিকিৎসাবিজ্ঞানে এসেছে এক নতুন দিগন্ত। ক্যালিফোর্নিয়ার দুই নামকরা চিকিৎসক সফলভাবে করেছেন বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম মূত্রাশয় প্রতিস্থাপন। এই অগ্রগতি কিডনি ও মূত্রাশয়ের জটিল রোগে ভুগছেন লক্ষ লক্ষ রোগীর জন্য নতুন আশার আলো।
কী ঘটেছে?
গত মাসেই ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ডা. ইন্দারবীর গিল ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস এঞ্জেলেসের ডা. নিমা নাসিরি মিলে ৮ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচার পরিচালনা করেন। রোগী ছিলেন ৪১ বছর বয়সী অস্কার লার্রাইনজার, যিনি একটি বিরল ক্যান্সারের চিকিৎসার পর তার কিডনি ও মূত্রাশয়ের বেশিরভাগ অংশ হারিয়েছেন।
লার্রাইনজার বললেন, “আমি যেন সময়ের বোমা ছিলাম। কিন্তু এখন আমার জীবনে নতুন আশা জাগছে।”
অস্কারের মূত্রাশয় স্বাভাবিকের তুলনায় ৩০ মিলিলিটার তরল ধারণ করতে পারত, যেখানে একটি স্বাভাবিক মূত্রাশয় ৭০০ মিলিলিটার তরল ধারণ করতে পারে। সাত বছর ধরে তিনি ডায়ালাইসিসে ছিলেন।
পুরানো পদ্ধতির সমস্যা
আগে যারা মূত্রাশয় অপসারণ করতেন, তাদের অন্ত্রের একটি অংশ নিয়ে মূত্রাশয়ের কাজ করানো হত। তবে এতে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ইউরিনারি ট্র্যাক্টে প্রবেশের কারণে প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতো। এর ফলে পাচনতন্ত্রেও জটিলতা হতো।
কিভাবে সফল হলো অস্ত্রোপচার?
অস্ত্রোপচারে প্রথমে দাতা থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়, তারপর একই দাতার মূত্রাশয় স্থাপন করা হয়। এরপর বিশেষ নতুন কৌশলে কিডনি ও মূত্রাশয় যুক্ত করা হয়। এই পদ্ধতিতে কিডনি সঙ্গে সঙ্গে ইউরিন উৎপাদন শুরু করে এবং রোগীর কিডনি কার্যক্রম উন্নত হয়। অস্ত্রোপচারের পর অস্কার স্বাভাবিকভাবেই মূত্রত্যাগ করতে পারেন, যা তার জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
ডাক্তাররা বলছেন, এই সফলতার পর চার জন রোগীর উপর পরীক্ষা চালানো হবে এবং পরে বড় একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে। যদিও রোগীদের শরীর প্রতিস্থাপিত অঙ্গ প্রত্যাখ্যান থেকে রক্ষা পেতে ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট নামক ওষুধ নিতে হয়, যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই অঙ্গ দান সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে।
ডা. গিল বলেন, “এটা চিকিৎসাবিজ্ঞানে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। যারা দীর্ঘদিন ধরে মূত্রাশয়ের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি নতুন জীবনের দরজা খুলে দিয়েছে।”
এই সফল অস্ত্রোপচার হাজার হাজার রোগীর জীবনে নতুন আশার আলো জাগাবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী।
মিমিয়া