
ছবি: সংগৃহীত
অনেক সময় আমাদের পা কেবল শরীরের ভারই বহন করে না, বরং শরীরের ভেতরের নীরব সংকেতও বহন করে। এমনই এক নীরব সংকেতদাতা হলো আমাদের কিডনি। শরীরের নিচের অংশে না থাকলেও, কিডনি যখন সঠিকভাবে কাজ না করে বা চাপে পড়ে, তখন তা পায়ের মাধ্যমে বার্তা পাঠাতে শুরু করে। এই লক্ষণগুলো খুব জোরালো বা স্পষ্ট হয় না, বরং ক্লান্তি, বয়স বা ভুল ভঙ্গিমার ফল বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু এসব সংকেতে মনোযোগ দিলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
নিচে পা ও পায়ের পাতায় দেখা দেওয়া এমন পাঁচটি কম আলোচিত লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যা কিডনির সমস্যা শুরু হওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে:
১. গোড়ালিতে মাঝে মাঝে ফোলাভাব
দিনের শেষে গোড়ালির চারপাশে নরম ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। এমনকি মোজার দাগও আগে থেকে বেশি গভীর হয়।
কিডনি যখন দুর্বল হতে শুরু করে, তখন শরীরের তরল নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয়। কিডনির একটি প্রধান কাজ হলো বাড়তি লবণ ও পানি শরীর থেকে বের করে দেওয়া। এই ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে পা ও গোড়ালিতে তরল জমে ফোলাভাব দেখা দেয়।
যদিও দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা বা অতিরিক্ত গরমেও এমন হতে পারে, কিন্তু যদি এটা নিয়মিত ঘটে এবং কোনো স্পষ্ট কারণ না থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
২. চুলকানি, কিন্তু চামড়ায় র্যাশ বা শুষ্কভাব নেই
পায়ের নিচের অংশ, বিশেষ করে পেশিতে অস্বস্তিকর চুলকানি হতে পারে, যদিও চামড়ায় কোনো দৃশ্যমান সমস্যা থাকে না।
কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে রক্তে বর্জ্য জমতে থাকে। এই বর্জ্য শরীর থেকে বের না হলে তা চামড়ার নিচে চুলকানির উদ্রেক করতে পারে — অনেক সময় কোনো র্যাশ বা শুকনোভাব ছাড়াই।
এই ধরনের চুলকানি কিডনি সমস্যা থেকে সৃষ্ট, যাকে বলা হয় ইউরেমিক প্রুরিটাস। এটা সাধারণত কিডনি রোগের পরবর্তী ধাপে দেখা দিলেও, শুরুতেই এভাবে ধরা পড়তে পারে।
৩. রাতে পেশিতে টান ধরা বা ক্র্যাম্প
রাতে বা বিশ্রামের সময় হঠাৎ করে পায়ের পেশিতে টান ধরা বা ঝাঁকুনির মতো অনুভব হতে পারে।
সঠিকভাবে কাজ না করলে কিডনি শরীরের খনিজ উপাদান (যেমন পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম) এর ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। এর ফলে দেখা দেয় ব্যাখ্যাতীত পেশির খিঁচুনি।
এই খিঁচুনিগুলো কোনো ব্যায়াম বা পানিশূন্যতার কারণে নয়, বরং শরীরের রসায়নের পরিবর্তনের লক্ষণ।
৪. পায়ের আঙুল বা গোড়ালির চামড়ায় রঙের পরিবর্তন
চামড়ায় হালকা কালচে ভাব বা আঘাতের মতো দাগ দেখা যেতে পারে, যদিও কোনো আঘাত লাগেনি।
কিডনি ও রক্ত সঞ্চালনের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয় এবং পায়ের দিকে কম অক্সিজেন পৌঁছায়। ফলে চামড়ায় দুশ্চিন্তাজনক রঙের পরিবর্তন হতে পারে।
চিকিৎসকেরা লক্ষ্য করেছেন যে, অনেক সময় কিডনির প্রাথমিক সমস্যা থাকলে এমন হালকা রঙ পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যাকে সাধারণত উপেক্ষা করা হয়।
৫. পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ ভাব
শান্তভাবে বসে থাকলেও পায়ের পাতায় হালকা ঝিনঝিনি বা অবশ অনুভূতি হতে পারে।
কিডনি ইলেক্ট্রোলাইট নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে স্নায়ুর সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিডনি যখন ঠিকমতো কাজ না করে, তখন শরীরে জমে থাকা বর্জ্য স্নায়ুতে প্রভাব ফেলতে পারে।
এ ধরনের অবস্থা পারিফেরাল নিউরোপ্যাথি নামে পরিচিত। যদিও এটা সাধারণত ডায়াবেটিসের সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু কিডনি সমস্যা থেকেও শুরু হতে পারে।
কিডনির ক্ষতির অন্যান্য লক্ষণ
কিডনির ক্ষতি শুরুতে নীরবেই ঘটে। অনেকেই বুঝতে পারেন না, যতক্ষণ না কিডনির কার্যকারিতা বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কিছু লক্ষণ ধীরে ধীরে দেখা দিতে পারে, যেমন –
-
ক্লান্তি বা দুর্বলতা
-
মনোযোগে ঘাটতি
-
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া (বিশেষ করে রাতে)
-
প্রস্রাবে ফেনা বা রক্ত
-
হাত-পা, চোখের নিচে বা গোড়ালিতে ফোলাভাব
এএইচএ