ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কেন কোটি মানুষের হৃদয় ছুটে যায় হজে?

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ২৩ মে ২০২৫; আপডেট: ২২:৩৬, ২৩ মে ২০২৫

কেন কোটি মানুষের হৃদয় ছুটে যায় হজে?

ছবি: সংগৃহীত

প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় ৩০ লক্ষ মুসলমান ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হজ পালন করতে সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কায় সমবেত হন। এটি শুধু একটি ধর্মীয় রীতি নয়—বরং একটি গভীর আধ্যাত্মিক যাত্রা, যা মুসলিম জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

ইন্দোনেশিয়া শীর্ষে, বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম
হজে অংশগ্রহণকারী দেশের তালিকায় ইন্দোনেশিয়া প্রতি বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক হাজী প্রেরণ করে। তালিকার পরবর্তী দেশগুলো হলো পাকিস্তান, ভারত, মিশর এবং বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রায় এক লক্ষাধিক মানুষ হজে অংশ নেন।

হজের উৎপত্তি ও ইতিহাস
হজ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো 'সংকল্প করা' বা 'গমনেচ্ছা'। ইসলামের পরিভাষায়, এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে নির্ধারিত আচার পালন করাকে বোঝায়। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, হজের সূচনা হয় নবী ইব্রাহিম (আ.)-এর মাধ্যমে, যিনি পুত্র ইসমাইল (আ.)-এর সহযোগিতায় কাবা পুনর্নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে হজের পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে যান।

হজের কার্যপদ্ধতি
হজ শুরু হয় ৮ই জিলহজ থেকে এবং শেষ হয় ১২ই জিলহজে। এই পাঁচদিনে হাজীরা মিনায় তাবুতে অবস্থান, আরাফাতের ময়দানে ওয়াকফ, মুজদালিফায় রাত যাপন, শয়তানের স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ, কুরবানি, মাথা মুন্ডন এবং কাবা শরীফে তাওয়াফসহ নানা রীতি সম্পাদন করেন।

হজ তিন প্রকার হতে পারে: হজে ইফরাদ, হজে কিরান এবং হজে তামাত্তু। বাংলাদেশি অধিকাংশ হাজী সাধারণত হজে তামাত্তু পালন করেন, যার মধ্যে ওমরাও অন্তর্ভুক্ত থাকে।

ইহরাম ও সমতার বার্তা
হজের সূচনা হয় ইহরাম পরিধানের মাধ্যমে—দুই খণ্ড সেলাইবিহীন সাদা কাপড়। এটি মানবসমতার প্রতীক। ইহরাম অবস্থায় ধনী-গরীবের পার্থক্য মুছে যায়। সবাই এক পোশাকে, এক কণ্ঠে তালবিয়া পাঠ করেন—"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…"

ভিড় ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ
একই সময়ে কোটি মানুষের উপস্থিতি বিশাল ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। হজ মৌসুমে প্রায় এক লাখ নিরাপত্তা কর্মী ও ২৫ হাজার চিকিৎসাকর্মী দায়িত্ব পালন করেন। তবে অতীতে ভিড়ে পদদলনের মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনাও ঘটেছে—১৯৯০ সালে ১৪২৬ হাজী এবং ২০১৫ সালে ৭০০ জন হাজী নিহত হন।


আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে হাজীদের মধ্যে হজের সময় সেলফি তোলার প্রবণতা বেড়েছে। ইসলামী পণ্ডিতদের মতে, এই অভ্যাস হজের আধ্যাত্মিকতা নষ্ট করে। তাই সৌদি কর্তৃপক্ষ পবিত্র স্থানগুলোতে ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

হজের পর মদিনা সফর ও বিদায় তাওয়াফ
হজ পালনের পর অনেক হাজী মদিনা গমন করেন এবং মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকেন। যদিও এটি হজের অংশ নয়, তবে এটি রাসূলের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। হজ শেষে প্রত্যাবর্তনের আগে ‘বিদায়ী তাওয়াফ’ করা ফরজ।

একটি জীবনের প্রস্তুতি
হজ পালন করার জন্য অর্থনৈতিক ও শারীরিক সামর্থ্য থাকা আবশ্যক। তাই অনেক দরিদ্র মুসলমান জীবনের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে হজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। ইতিহাস বলছে, ব্রিটিশ আমলে বাংলার মুসল্লিরা মুম্বাই হয়ে জাহাজে করে হজে যেতেন। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে মাঝপথেই ফিরে আসতেন—তাদের বলা হতো "মুম্বই হাজি"।

এসএফ
 

×