ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

১৪শ’ বছর আগেই গভীর সমুদ্রের রহস্য জানিয়েছিল কোরআন

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৩ মে ২০২৫

১৪শ’ বছর আগেই গভীর সমুদ্রের রহস্য জানিয়েছিল কোরআন

ছবি: সংগৃহীত

সমুদ্রের হাজার হাজার মিটার গভীরে এমন এক বিস্ময়কর অঞ্চল রয়েছে, যেখানে সূর্যের আলো এক বিন্দুও পৌঁছায় না। অন্ধকার সেখানে এতই ঘন যে একজন মানুষ তার নিজের হাতটাও দেখতে পায় না। এই গভীরতায় একটির পর একটি অন্ধকার স্তরের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অথচ এই জায়গাতেও হাজার হাজার প্রাণী এমনভাবে অভিযোজিত হয়েছে যে তারা নিজেরাই নিজেদের আলো তৈরি করতে পারে এবং নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে।

এই তথ্য বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন মাত্র কিছু বছর আগে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এই গভীর সমুদ্রের অন্ধকার ও আলো সম্পর্কিত তথ্য পবিত্র কোরআনে প্রকাশ পেয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১৪শ বছর আগেই।

পবিত্র কোরআনের আলো
সুরা নূর-এর একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন:

“অথবা তাদের (কাফেরদের) অবস্থান এমন, যেমন গহীন সাগরে অন্ধকার, যাকে ঢেউ আচ্ছন্ন করছে, তার উপরে আরেক ঢেউ, তার উপরে মেঘ। একটার উপর একটা অন্ধকার; কেউ যদি নিজের হাত বের করে, সে তা দেখতে পায় না। আল্লাহ যার জন্য আলো রাখেন না, তার জন্য কোন আলো নেই।”
(সূরা নূর, আয়াত ৪০)

এ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে গভীর সমুদ্রের একের পর এক অন্ধকার স্তর এবং সেখানে আলোর অনুপস্থিতি। বিজ্ঞান বলছে, সূর্যের আলো প্রায় ২০০ মিটার গভীর পর্যন্তই প্রবেশ করতে পারে। এর নিচে শুধুই গাঢ় অন্ধকার, যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন “Midnight Zone”, অর্থাৎ মাঝরাতের মতো ঘন অন্ধকার অঞ্চল।

আধুনিক বিজ্ঞান যা বলছে
এত গভীর অন্ধকারে কীভাবে প্রাণীরা টিকে থাকে? বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন যে গভীর সমুদ্রের প্রাণীরা বায়োলুমিনেসেন্স নামক এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজস্ব আলো তৈরি করে। এই আলো সাধারণত নীল বা সবুজ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে এবং এটি ব্যবহৃত হয় শিকার ধরতে, আত্মরক্ষায় কিংবা যোগাযোগের জন্য।

এই বায়োলুমিনেসেন্ট প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে:

  • জেলিফিশ
  • ল্যান্টার্ন ফিশ
  • এংলার ফিশ
  • টমোপটারিস (যা হলুদ আলো তৈরি করে)
  • এমনকি কিছু ব্যাকটেরিয়াও

কিছু মাছ এমন আলোও তৈরি করে, যা লাল বা ইনফ্রারেড — যা মানুষের চোখে দেখা যায় না। তারা এই আলো ব্যবহার করে নিরবে শিকার ধরতে সক্ষম হয়।

গবেষণায় বলা হচ্ছে, গভীর সমুদ্রের প্রায় ৭৬% প্রাণী বায়োলুমিনেসেন্ট। অথচ এই বিস্ময়কর তথ্য, যেটি আমরা জানতে পারলাম আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে, তা আজ থেকে ১৪০০ বছর আগেই পবিত্র কোরআনে তুলে ধরা হয়েছিল।

হৃদয়ের অন্ধকারের দিকেও ইঙ্গিত
সুরা নূরের আয়াতটি কেবল সমুদ্রের গভীর অন্ধকারকেই নয়, মানুষের অন্তরের অন্ধকারকেও বোঝায়। আল্লাহ বলেন, “যার জন্য আল্লাহ আলো রাখেন না, তার জন্য কোনো আলো নেই।” অর্থাৎ কেউ যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েত, জ্ঞান বা অন্তরের দৃষ্টি না পায়, তাহলে সে চিরকাল অন্ধকারে রয়ে যাবে।

এই অন্ধকার হলো:

  • অবিশ্বাস
  • কুফরি
  • অজ্ঞতা
  • শিরক
  • নিকৃষ্ট আমল

যার ফলে একজন মানুষ যেমন ঘন অন্ধকারে নিজের হাত দেখতে পায় না, তেমনি কেউ আল্লাহর আলো ছাড়া সত্যের পথ খুঁজে পায় না।

এই বৈজ্ঞানিক তথ্য কি কারও নিজস্ব জ্ঞান হতে পারে?
এখন, আপনার কী মনে হয়? ১৪০০ বছর আগের এক ব্যক্তি, যিনি ছিলেন উম্মী (অশিক্ষিত), তিনি কি নিজের জ্ঞান থেকে এমন জটিল সমুদ্রবিজ্ঞান বা আলো-বিজ্ঞানের তথ্য দিতে পারতেন?

এটি কি আবারও প্রমাণ করে না যে কোরআন শুধুমাত্র একজন মানুষের লেখা নয় — বরং এটি এসেছে সেই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি আসমান, জমিন, আলো ও অন্ধকার — সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং প্রতিপালক?

এসএফ

×