
ছবি : সংগৃহীত
গাজীপুরে ৪৭ জন তরুণ-তরুণী আজ পুলিশে চাকরি পেয়েছেন—কোনো তদবির বা ঘুষ ছাড়াই। শুধুমাত্র মেধা, যোগ্যতা এবং অফুরন্ত পরিশ্রমই ছিল তাদের পথচলার সঙ্গী। এ যেন শুধুই একটা চাকরি নয়, এটা একেকটি জীবনের পালাবদলের গল্প, একেকটি পরিবারের গর্বের আখ্যান।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সন্ধ্যায় গাজীপুর পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন নিয়োগ কমিটির কমিটির চেয়ারম্যান ও গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো: যাবের সাদেক।
নবচাকরি প্রাপ্ত একজন বললেন, "আমি আগে থেকেই চাইছিলাম—যদি চাকরিটা হয়ে যায়, আমি আব্বুকে আর বিদেশে থাকতে দিব না। নিয়ে আসব বাংলাদেশে। কারণ আম্মু তো বাসায় একা একা। আর আব্বুরও তো এখন বয়স হইছে। এখন তো উচিত যে উনি বাসায় একটু রেস্ট করেন।”
এই মেয়েটির জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তাঁর বাবা। “প্রথম যেদিন আমি মাঠে আসলাম, আব্বু ভাবছিলেন, ‘তুমি তো কখনো এত কষ্ট করোনি’। উনি রাজি ছিলেন না। তারপরও আমি না বলে মাঠে গেলাম। আমার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরতেছিল—চাকরি পাইলেই আব্বুকে দেশে আনব।”
চোখে পানি এনে দেওয়া স্মৃতির খণ্ডচিত্রে তিনি বলেন, “তৃতীয় দিন যখন ১০০০ মিটার দৌড় হইলো, তখন একদম হাল ছাইড়া দিতে ইচ্ছা করছিল। মনে হচ্ছিল আমি পারব না। হঠাৎ করে আব্বুর চেহারা চোখের সামনে ভাইসা উঠলো। আমি নিজেরে নিজে বললাম—না, আমার পারতেই হবে, আমার বাবার জন্য হলেও পারতেই হবে।”
এই লড়াইয়ে পাশে ছিলেন তাঁর মা। কাঁপা গলায় বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ, কোনো প্রকার ঘুষ ছাড়া একদম স্বচ্ছভাবে প্রক্রিয়াটা হইলো। আমি অনেক খুশি। আমার ছেলে পুলিশে চাকরি করে, এখন মেয়েটাও পুলিশে। মানুষ পুলিশ নিয়ে অনেক কথা বলে, ছোট করে। তখন আমার খারাপ লাগে। কিন্তু এখন আমি গর্বিত—আমার ছেলেমেয়ে দুইজনই মেধায় চাকরি পাইছে। এক টাকাও ঘুষ লাগে নাই।”
আরেকজন তরুণ চোখে স্বপ্ন আর মুখে কান্না নিয়ে বলেন, “আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ডিফেন্সে চাকরি করব। সেনাবাহিনীতে দুইবার, পুলিশে একবার চেষ্টা করেছি। আগেরবার ভাইভা পর্যন্ত গেছিলাম কিন্তু চাকরি হয়নি। এইবার খুব হতাশ ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন নামটা শুনলাম, চোখ দিয়ে পানি বের হইল। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া।”
এই স্বপ্ন বাস্তব করতে যারা নীরবে কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, “আপনারা যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের অভিজ্ঞতা শুনেছেন, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেছেন। এতে বোঝা যায়, আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ। আমরা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বন্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার রেখেছি। আল্লাহর রহমতে আমরা একদম শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতায় এই নিয়োগটা সম্পন্ন করেছি।”
পুলিশ সুপার আরও বলেন, নিয়োগের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক কোটা ছিল কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় একজন্র উত্তীর্ণ হয়নি। ফলে ৪৭ জন প্রার্থীই মেধার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছে। নিয়োগ যাতে স্বচ্ছ করা যায়, কেউ যাতে দালালের খপ্পরে না পরে সে জন্য গোয়েন্দা নজরদারি করা হয়। শতভাগ স্বচ্ছ, যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়েছে।
আজকের এই দিন শুধু একটি নিয়োগের গল্প নয়—এটা হাজারো হতাশ তরুণের মনে আশার আলো জ্বালানোর দিন। এটা প্রমাণ করে দেয়, এখনো এদেশে যোগ্যতা ও সততার মূল্য আছে। আর ভালোবাসা ও পরিশ্রম থাকলে, জীবন বদলাতেই পারে।
সা/ই