
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ ও শহুরে এলাকায় এখনও অনেক বাড়ি রয়েছে যেগুলোর নিজস্ব প্রবেশ পথ নেই। ফলে এসব বাড়ির মালিকদেরকে প্রতিবেশীর জমির ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু যদি সেই প্রতিবেশী হঠাৎ করে ওই চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়, তখন কী হবে? এমন পরিস্থিতিতে কী আছে আইনি সমাধান? আজ আমরা আলোচনা করবো এ ধরনের পরিস্থিতির আইনি দিক ও করণীয় সম্পর্কে।
প্রাথমিক সমাধান: পারিবারিক ও সামাজিক সালিশ
এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে প্রথমে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সালিশের আয়োজন করতে হবে। প্রতিবেশীকে বোঝাতে হবে যে, একদিন লাশও বের হবে সেই বাড়ি থেকে, আর সেই লাশ বের করতেও একটি রাস্তা প্রয়োজন। এটি শুধুমাত্র মানবিক প্রশ্ন নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার—বাড়িতে প্রবেশ ও বের হওয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের জন্মগত অধিকার।
চলাচলের অধিকার ও আইনের দৃষ্টিকোণ
যে জমির ওপর দিয়ে চলাচল হচ্ছে সেটি যদি ব্যক্তিমালিকানাধীন হয়, তাহলে মালিক সেই জমি ব্যবহারে বাধা দিতে পারেন। তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে সেই জমি ব্যবহারের অধিকার পাওয়া যেতে পারে। এই ধরনের অধিকারকে আইনের ভাষায় "Public Easement" বা বাংলায় "সুখ-অধিকার" বলা হয়। এটি হলো জনস্বার্থে কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তির সীমিত ব্যবহারের অধিকার, যেমন চলাচল, আলো, পানি ইত্যাদি।
সমাধানের পর্যায়ক্রমিক ধাপ:
- সামাজিক সমঝোতা ও সালিশ: প্রথমে স্থানীয়ভাবে আলোচনা, বোঝানো ও সালিশের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
- স্থানীয় প্রশাসনিক সহযোগিতা: গ্রাম এলাকায় হলে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে অভিযোগ জানানো যায়। শহর বা পৌরসভা এলাকায় হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা মেয়রের সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
আইনি পদক্ষেপ (CrPC ধারা ১৩৩):
যদি উপরের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩৩ ধারার আওতায় মামলা করতে হবে। এই ধারা অনুযায়ী, কেউ যদি অপর কাউকে বাড়িতে প্রবেশ বা বের হওয়ার পথে বাধা দেয়, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের অধীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ADM) এর কাছে আবেদন করতে পারেন।
আবেদনপত্রে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে যে, "এই রাস্তা ছাড়া বাড়িতে প্রবেশের আর কোনো বিকল্প পথ নেই।" ADM সরেজমিন তদন্ত করে যদি সেটি সত্য প্রমাণিত পান, তবে তিনি আইনি নির্দেশনার মাধ্যমে চলাচলের পথ উন্মুক্ত করার আদেশ দিতে পারেন।
বিকল্প জমি বা অর্থ প্রদানের সুযোগ:
যদি প্রতিবেশী জমি বিক্রি করতে সম্মত না হন, তবে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে জমি অধিগ্রহণেরও সুযোগ আছে। প্রয়োজনে প্রতিবেশীকে বিকল্প জমি দিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যায়।
মানবিকতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং আইনি অধিকার—তিনটিই এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সালিশি পদ্ধতির মাধ্যমে না হলে, ফৌজদারি আইনের ১৩৩ ধারা অনুসরণ করে সমস্যার স্থায়ী সমাধান পাওয়া সম্ভব।
মারিয়া