
ছবি: প্রতীকী
হযরত মুসা (আ.) এর লাঠি—যা আল্লাহর হুকুমে সাপে রূপান্তরিত হয়েছিল, লোহিত সাগরের পানি দ্বিখণ্ডিত করেছিল এবং বনী ইসরাইলের জন্য অলৌকিক দিকনির্দেশনা বয়ে এনেছিল—এই রহস্যময় বস্তুটি হাজার বছর ধরে ইতিহাস, ধর্ম এবং গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই অলৌকিক লাঠিটি এখন কোথায়? আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রত্নতত্ত্ব আজ এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার এক নতুন দরজা খুলে দিয়েছে।
বাইবেল, তাওরাত ও কুরআন শরীফ—তিনটি প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থেই হযরত মুসা (আ.)-এর লাঠির অলৌকিক ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এ লাঠি ফিরআউনের দরবারে সাপে পরিণত হয়ে জাদুকরদের হার মানায়, লোহিত সাগরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ইস্রাইলি জাতিকে মুক্তির পথ করে দেয় এবং মরুতে পানির উৎস তৈরি করে। এতসব অলৌকিক ক্ষমতা থাকার কারণে এই লাঠিকে নিয়ে কৌতূহলও চরমে।
ইতিহাস কী বলে?
ইহুদী ও খ্রিস্টান ঐতিহ্যে বিশ্বাস করা হয়, মুসার লাঠিটি এক সময় পবিত্র আরক অব কভেন্যান্টে সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ সালে বাইবেল মতে যখন ব্যাবিলোনীয়রা জেরুজালেম দখল করে, তখন এই আরক রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়। অনেকে বিশ্বাস করেন, এ লাঠি সেই সময় থেকেই হারিয়ে গেছে।
প্রযুক্তি কী বলছে?
বর্তমানে প্রযুক্তিগত গবেষণা যেমন গ্রাউন্ড-পেনিট্রেটিং রাডার (GPR), স্যাটেলাইট ইমেজিং এবং প্রত্নতাত্ত্বিক মডেলিং ব্যবহার করে বহু গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে জেরুজালেম, সিনাই মরুভূমি এবং মিসরের নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে। সম্প্রতি একটি ইসরায়েলি গবেষণা দল দাবি করেছে, জেরুজালেমের পুরাতন শহরের নিচে একটি গোপন চেম্বারে প্রাচীন ধর্মীয় কিছু সামগ্রী পাওয়া যেতে পারে বলে তারা বিশ্বাস করে, যার মধ্যে মুসার লাঠিও থাকতে পারে।
বিতর্ক ও বিশ্বাস
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, হযরত মুসা (আ.)-এর লাঠি কেয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে এবং ভবিষ্যতের এক সময় তা আবার প্রকাশ পাবে। কেউ কেউ মনে করেন, এটি ইমাম মাহদির আগমনের সময় আবার দেখা যাবে। তবে বিজ্ঞান এই বিশ্বাসকে প্রমাণ বা অপ্রমাণ করতে পারছে না।
হযরত মুসা (আ.)-এর লাঠি শুধু একটি বস্তু নয়, বরং এটি ইতিহাস, বিশ্বাস ও অলৌকিকতার এক জীবন্ত প্রতীক। প্রযুক্তি হয়তো একদিন আমাদের কাছে এই রহস্য উদঘাটন করে আনবে, কিংবা হয়তো এটি চিরকালই বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার বিষয় হয়েই রয়ে যাবে।
নুসরাত