
ছবি: সংগৃহীত
বৈশাখে আম পাকে না। তবে যে কবি লিখেছেন? এককালে আমের হরেক জাত ছিল—টক-মিষ্টি, সিঁদুরে, হালকা সবুজ, কালচে সবুজ, ছোট-বড়, গোল-লম্বাটে হরেক স্বাদের, হরেক রঙের। দেশি-বুনো জাত—সব। বৈশাখ থেকে শুরু করে আশ্বিনে গিয়ে শেষ হতো আম পাকার সব হিসাব। কবি যখন লিখেছেন, তখন হয়তো বেশির ভাগ আম বৈশাখেই পাকত। এখন পাকে জ্যৈষ্ঠে। তাই বলে জ্যৈষ্ঠ অবধি অপেক্ষা করব আমরা? কক্ষনো নয়।
সুকুমার রায় যা-ই বলুন, পল্লিকবি যে আবার বলেছেন, ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়ানোর সুখের কথা। এ সুখ পাকা আমে নয়। সবুজ-সবুজ, কাঁচা-কাঁচা আমের ভারে নুয়ে পড়া ডালগুলোতেই যেন আমাদের সব আনন্দ। বুভুক্ষুর মতো চেয়ে থাকি, ঢিল ছুড়ি। ব্যর্থ হয়ে অপেক্ষা করি ঝড়ের জন্য।
আম গ্রীষ্মকালীন ফলের রাজা হিসেবে পরিচিত। মিষ্টি স্বাদ, রসালো গঠন এবং মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণের জন্য আম শুধু উপাদেয়ই নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ উপাদান, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে, যা শরীরের নানা উপকারে আসে। নিচে আম খাওয়ার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা আলোচনা করা হলো—
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে:
আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ ও ই থাকে। এই ভিটামিনগুলো শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ভিটামিন সি শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বাড়িয়ে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফলে নিয়মিত আম খেলে সাধারণ সর্দি-কাশি, ফ্লু প্রভৃতি সংক্রমণের আশঙ্কা কমে।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে:
আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও বিটা-ক্যারোটিন, যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক এবং বয়সজনিত চোখের সমস্যাও কমাতে সাহায্য করে। শিশুদের চোখের বিকাশেও এটি উপকারী।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী:
আমে থাকা ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা ত্বককে সতেজ ও টানটান রাখে। এছাড়া ভিটামিন এ চুলের গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নিয়মিত আম খেলে ত্বকে প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য আসে এবং ব্রণ-ফুসকুড়ির প্রবণতা কমে।
হজমে সহায়তা করে:
আমে ডায়েটারি ফাইবার ও এনজাইম (যেমন: অ্যামাইলেয়েস) থাকে, যা খাদ্য হজমে সহায়তা করে। এটি পেট পরিষ্কার রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং হজমশক্তি বাড়ায়। বিশেষ করে যারা নিয়মিত হজমজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য পাকা আম হতে পারে উপকারী ফল।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়:
আমে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়। ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে:
আমে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়ক। বিশেষ করে যেসব নারী রক্তস্বল্পতায় ভোগেন, তাদের জন্য আম হতে পারে একটি প্রাকৃতিক সমাধান। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন সি আয়রনের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
যদিও আমে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, তবে এটি ফাইবার ও পানি সমৃদ্ধ হওয়ায় পরিমিত পরিমাণে খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভব হয়। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে:
আমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন—অ্যাস্ট্রাগালিন, কুয়ারসেটিন, গ্যালিক অ্যাসিড এবং ম্যাঙ্গিফেরিন কোষের ক্ষয় রোধ করে। এগুলো ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিশেষত স্তন, প্রোস্টেট, লিউকেমিয়া এবং কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে আম সহায়ক হতে পারে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়:
আমে গ্লুটামিন অ্যাসিড নামে একটি উপাদান থাকে, যা স্মৃতিশক্তি ও মনঃসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থী ও বয়স্কদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন বি৬ নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনে সাহায্য করে, যা মস্তিষ্ককে সচল রাখে।
জীবনীশক্তি বাড়ায়:
আমে প্রাকৃতিক শর্করা, ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের সমন্বয় শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে এক গ্লাস আমের জুস বা কাঁচা আমের পানীয় শরীরকে তরতাজা করে তোলে। এটি ক্লান্তি দূর করে ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
আম শুধু স্বাদের দিক থেকে নয়, পুষ্টিগুণেও অতুলনীয়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পরিমিত পরিমাণে আম রাখলে দেহ–মন দুইই উপকৃত হয়। তবে, অতিরিক্ত আম খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য। তাই সব সময় পরিমিতি বজায় রেখে মৌসুমি এই ফলের স্বাদ ও গুণ দুটোই উপভোগ করুন।
মুমু