ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অরুণাচল নিয়ে চীনের নতুন কৌশল, তিন দিক থেকে চাপে ভারত !

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ২৩ মে ২০২৫

অরুণাচল নিয়ে চীনের নতুন কৌশল, তিন দিক থেকে চাপে ভারত !

ছবি: সংগৃহীত

অরুণাচল নিয়ে চীনের নতুন কৌশল: নাম বদলের মাধ্যমে মানসিক আধিপত্যের চেষ্টা ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে ঘিরে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-চীন সীমান্ত রাজনীতি। চীন সম্প্রতি অরুণাচলের ২৭টিরও বেশি স্থানের নাম পরিবর্তন করেছে, যাকে তারা নিজেদের দক্ষিণ তিব্বতের অংশ বলে দাবি করে আসছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে দানা বেঁধেছে কূটনৈতিক উত্তেজনা।

চীনের এই নামকরণ কৌশলকে ভারত দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণবীর জাসোয়াল বলেন, “চীনের এমন প্রচেষ্টা হাস্যকর ও অর্থহীন। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে।”

নাম বদলের পেছনে ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের এই নামকরণ কৌশল ‘নেম ওয়ারফেয়ার’-এর অংশ, যেখানে মানসিক ও মানচিত্রের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালানো হয়। এটি শুধুমাত্র কাগজে-কলমে নয়, বরং আন্তর্জাতিক মহলে এক ধরণের মিথ্যাচার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস। বেইজিং এবার ১৫টি পাহাড়, ৪টি গিরিপথ, ২টি নদী, একটি হ্রদ ও ৫টি জনবসতির নাম বদলে নতুনভাবে চীনা ভাষায় নামকরণ করেছে।

২০১৭, ২০২১, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালের পর এবার ২০২৫-এর মে মাসে পঞ্চমবারের মতো এই উদ্যোগ নিল চীন। বেইজিং এই অঞ্চলকে ‘চাংনাং’ নামে আখ্যা দিচ্ছে, যা তাদের দাবি অনুযায়ী দক্ষিণ তিব্বতের অংশ।

ভারত-চীন কূটনৈতিক টানাপোড়েন ও সামরিক প্রস্তুতি

অরুণাচল নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই পূর্ব লাদাখে চীনের সঙ্গে সীমিত সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে ভারত। তবে চীনের একের পর এক পদক্ষেপকে দিল্লি মানসিক চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে দেখছে। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু এবং চীনের অন্তত চারজন নিহত হওয়ার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ঠান্ডা। সাম্প্রতিক সময়ে আবারও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) বরাবর সামরিক তৎপরতা বেড়েছে।

চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তায় পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা

ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার পেছনে চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তার অভিযোগ উঠেছে। পাকিস্তানের জে-১০সি 'ভিগোরাস ড্রাগন' যুদ্ধবিমান, যা চীন সরবরাহ করেছে, ভারতের রাফালে ফাইটার জেটকে টেক্কা দিয়েছে বলে দাবি করেছে বিভিন্ন সূত্র। এসব আধুনিক যুদ্ধবিমানে রয়েছে উন্নত রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম—যা পাকিস্তানকে দিয়েছে কৌশলগত সুবিধা।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের চ্যালেঞ্জ

বিশ্লেষকদের মতে, চীনের এই মানচিত্র কৌশল এক ধরনের ধীরে ধীরে বিষ প্রয়োগের মতো, যেখানে ঐতিহাসিক দাবি প্রতিষ্ঠা করে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। চীন তার পাঠ্যপুস্তকে অরুণাচলকে নিজের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করছে, যা ভারতের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রজন্মভিত্তিক মানসিক যুদ্ধ।

ভারত এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে—উত্তরে চীন, পশ্চিমে পাকিস্তান আর আন্তর্জাতিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এই পরিস্থিতিতে ভারতের প্রতিটি কূটনৈতিক ও সামরিক সিদ্ধান্ত পুরো এশিয়ার নিরাপত্তা ভারসাম্যে প্রভাব ফেলছে।

অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের নাম বদলের খেলাটি নিছক মানচিত্র সংশোধন নয়, বরং এটি ইতিহাস, মানসিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক বহুমাত্রিক লড়াই। ভারতের জন্য এটি শুধু একটি সীমান্ত ইস্যু নয়, বরং জাতীয় স্বার্থ, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন। এখন সময়ই বলে দেবে—চীনের মানসিক যুদ্ধে ভারত কতটা দৃঢ় থাকতে পারে।

সূত্র: https://youtu.be/0ptqyKAx75g?si=wa0bBb-N0bal_RvE

আসিফ

×