
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের রাজাপুর, কাকরিয়া, পরমানন্দপুর, বরইচারা, রাণীদিয়া ও ডুবাজেল এই গ্রামগুলো মেঘনার তীরবর্তী ভাটি অঞ্চল। কিছু মাস আগেও এখানকার হাজারো মানুষ এক টুকরো স্বপ্নে বিভোর ছিল: কাকরিয়া নদী খননের মাধ্যমে বদলে যাবে তাদের জীবনযাত্রা। বলা হয়েছিল, শাখা নদীটি খনন হলে নদীর নাব্যতা ফিরবে, কৃষি উৎপাদন বাড়বে, সেচব্যবস্থা সহজ হবে, যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনও হবে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ।
কিন্তু বাস্তব চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল একদিকে, অথচ কাজ শুরু হয়েছে সম্পূর্ণ অন্যখানে মেঘনার মূল স্রোতে। এর ফলে কাকরিয়া ও রাজাপুরসহ আশেপাশের গ্রামগুলো এখন ভাঙনের হুমকিতে।
এই অঞ্চলের মানুষের আস্থা ও আশার উপর যে নির্মম আঘাত এসেছে, তা শুধু দুঃখজনক নয়, বরং একটি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রহসনের নামান্তর। কাকরিয়া নদীটি প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং দুই পাড়ে রয়েছে প্রায় দুই হাজার একর উর্বর কৃষিজমি। বর্ষাকালে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা, আর শুষ্ক মৌসুমে নদীর ভরাট অংশ হয়ে ওঠে কৃষি, গবাদিপশুর ব্যবহার এবং চলাচলের অন্তরায়।
এই বাস্তবতায় শাখা নদীটি খননের বদলে মূল নদী খননের অনুমতি দেওয়া এক গভীর প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেন এই সিদ্ধান্ত? স্থানীয় আলোচনা বলছে শাখা নদীতে অধিকাংশ জায়গায় পলি থাকলেও বালুর পরিমাণ কম, ফলে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নয়। সেখানেই গেঁথে আছে মূল সমস্যা জনস্বার্থের আড়ালে এক ধরনের লোভী সিন্ডিকেটের লাভের খেলা।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত জনগণের কথা শোনা, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাকরিয়া নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া এবং প্রকৃত জনস্বার্থে কাজ করা। না হলে ভাটি অঞ্চলের এই মানুষদের আশা-আকাঙ্ক্ষা কেবলই উপেক্ষিত এক দীর্ঘশ্বাস হয়ে থাকবে।
আরিফুল ইসলাম সুমন
সিনিয়র সহ-সভাপতি
সরাইল রিপোর্টার্স ইউনিটি
মিমিয়া