রাজিয়া খাতুন
জন্ম থেকেই দুই হাত অকার্যকর। আঙুলগুলো খাটো, বাঁকা, স্পর্শ করার শক্তিটুকুও নেই। কিন্তু পা-ই হয়ে উঠেছে তার আশার দিগন্ত। ঠাকুরগাঁওয়ের রাজিয়া খাতুন পায়ের আঙুলে কলম ধরে এসএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় পাস করেছেন। মাস্টার্স পরীক্ষাও দিয়েছেন, একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও থেমে যাননি। এবার তার একমাত্র চাওয়া নিজের যোগ্যতায় একটি চাকরি।
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির এক কোণে পায়ের আঙুলে কলম ধরে চাকরির আবেদনপত্র লিখছিলেন রাজিয়া। পাশে ছিলেন স্বামী আবু সুফিয়ান ও ছোট্ট কন্যা। রাজিয়ার বাড়ি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মিস্ত্রিপাড়া গ্রামে। বাবা দিনমজুর, মা গৃহিণী। ভাইয়েরা প্রাথমিকের গ-িও পেরোতে পারেননি, অথচ রাজিয়া ঠিকই কলেজের গ-ি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়েছেন। শুধু পড়াশোনাই নয়, প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত ছিল তার কাছে সংগ্রামের।
২০২৩ সালে রাজিয়ার বিয়ে হয় একই এলাকার দিনমজুর আবু সুফিয়ানের সঙ্গে। সংসারে আসে এক ফুটফুটে কন্যাসন্তান। ভালোবাসা আর মমতায় গড়ে ওঠা ছোট্ট সংসারটি হঠাৎ ছন্দ পতন ঘটে। সম্প্রতি কাজ করতে গিয়ে আহত হন সুফিয়ান। এখন আর আগের মতো উপার্জন করতে পারেন না।
এই কঠিন বাস্তবতায় রাজিয়া ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কাছে একটি চাকরির আবেদন করেন। বলেন, ‘হাতে কিছু করতে পারি না, কিন্তু মন দিয়ে সব পারি। শুধু একটা চাকরি চাই, যেন আমার পরিবারটা বাঁচে, আমার মেয়ের ভবিষ্যৎটা নিরাপদ হয়।’
দাপ্তরিক সহানুভূতি থাকলেও এখনো মেলেনি কাক্সিক্ষত চাকরিটি। কয়েকটি চাকরির পরীক্ষায় ভালো করলেও সাক্ষাৎকার বোর্ডে গিয়েই ফিরে আসতে হয়েছে। ‘শুধু শারীরিক অবস্থা দেখে কেউ আর ডাকেন না।’
স্বামী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘রাজিয়া শুধু স্ত্রী না, সে আমার অনুপ্রেরণা। সে পা দিয়ে রান্না করে, ঘর সামলায়, সন্তানকে দেখে। সরকার যদি তার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করত, আমাদের জীবনে নতুন আলো আসত।’
আয়েশা খাতুন নামের একজন বলেন, ‘ওর মতো মেধাবী আর পরিশ্রমী মেয়ে খুব কম দেখা যায়। ওকে সহায়তা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।’
