ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফেসবুক থেকে শুরু, বছরে আয় ৫ লাখ ডলার

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ২৪ মে ২০২৫

ফেসবুক থেকে শুরু, বছরে আয় ৫ লাখ ডলার

ফেসবুকে একটি ছোট বিজ্ঞাপন পোস্ট দিয়েই শুরু হয়েছিল ব্যবসা। আজ সেই ব্যবসা থেকে এমবার স্টারলিং আয় করছেন বছরে প্রায় ৫ লাখ ডলার। 'গুড উইচ ক্লিনিং' নামের ক্লিনিং সার্ভিস কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এমবারের এই অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প যেন বহু তরুণ উদ্যোক্তার জন্য পথ দেখায়।

চাকরি না পেয়ে নিজেকেই নিয়োগ
২০১৭ সালে কানসাসের ম্যানহাটানে (যেটিকে ‘লিটল অ্যাপল’ বলা হয়) এসে এমবার বুঝতে পারেন, তার কাজের অভিজ্ঞতা থাকলেও চাকরি পাওয়া সহজ হবে না। কেউ তাকে নিয়োগ দিতে চায় না – কারও কাছে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কম, আবার কারও মতে অভিজ্ঞতা বেশি। সাত মাস চেষ্টার পর একসময় বিরক্ত হয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন: "আমি নিজেকেই চাকরি দেব।"

ঘরোয়া ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে শুরু
এমবার মাত্র ১০০ ডলার বাঁচিয়ে একটি ডিসকাউন্ট স্টোর থেকে কিছু ক্লিনিং সামগ্রী কিনে ব্যবসা শুরু করেন। নিজের বাড়ির ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়েই শুরু হয় কাজ। তার কোম্পানির নাম রাখেন ‘Good Witch Cleaning’—ওজের জাদুকর নিয়ে নামকরণটি স্থানীয় এক জাদুঘরের কাছাকাছি বসবাস করার কারণে মাথায় আসে। একটি কালো গাড়িতে গোলাপি ডাইনি টুপি লাগিয়ে আকর্ষণীয় ব্র্যান্ডিং করেন তিনি।

গ্রাহক পেলেন ফেসবুকেই
প্রথম দিকের দিনগুলো ছিল কঠিন। তখন বীমা না থাকায় গ্রাহকদের বলেন, “আমি এই কাজ করতে চাই, কিন্তু বীমার জন্য আমাকে আয় করতে হবে। আপনি যদি আমাকে সুযোগ দেন, আমি ভালো দাম ও সেবা দেব।” মাত্র ৯৯ ডলারের হাউস ক্লিনিং অফার দিয়ে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রথম গ্রাহক পান।

দ্রুত কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ
প্রথম বছরেই তিনি একজন কর্মী নিয়োগ দেন। কোম্পানিতে কর্মীদের সাব-কন্ট্রাক্টর না রেখে পূর্ণ প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি ও উপকরণ প্রদান করেন। এমবার ও তার কর্মীদের অনেকেই হাউস ক্লিনিং টেকনিশিয়ান সার্টিফিকেশন (IICRC) পেয়েছেন। প্রতি শুক্রবার সকালের নাশতার পর প্রশিক্ষণ হয়।

প্যান্ডেমিকে পরিবর্তন আনেন পরিকল্পনায়
করোনা মহামারির সময় ক্লায়েন্ট হারিয়ে ফেলেন ৬০% পর্যন্ত। সেই সময় দ্রুত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে জীবাণুনাশ ও স্যানিটাইজেশন সংক্রান্ত সার্টিফিকেশনে বিনিয়োগ করেন। তার মতে, “যদি ব্যবসা ধসে পড়ে, অন্তত আমি নিজের আদর্শ নিয়ে ধবংস হব।” সে কারণেই তিনি তার কোম্পানিকে প্রকাশ্যেই সমর্থনকারী বানান ফেমিনিস্ট, LGBTQIA এবং অভিবাসীবান্ধব মূল্যে।

কর্মীদের জন্য মানবিক পরিবেশ
কোম্পানিতে কর্মীদের জন্য লিভিং ওয়েজ, স্বাস্থ্যসেবা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। এমবার মনে করেন, কর্মীদের পেশাদারভাবে মূল্য দিলে, প্রশিক্ষণ দিলে ও পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ দিলে তারা টিকে থাকতে চায়।

রাজস্বে বড় অগ্রগতি
২০১৭ সালে যেখানে রাজস্ব ছিল মাত্র ১১ হাজার ডলার, ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ডলার। এরপর:

২০১৯: $১১৯,০০০

২০২০: $২১৬,০০০

২০২১: $৪৬৭,০০০

বর্তমানে তারা সচেতনভাবেই ব্যবসাকে স্থিতিশীল রেখেছেন এবং রেসিডেনশিয়াল ক্লিনিং-এ ফোকাস করছেন।

সামাজিক দায়বদ্ধতায় নজির
প্যান্ডেমিকের সময় তারা হাউজিং অথরিটি ও ইমার্জেন্সি শেল্টারে পরামর্শসেবা দিয়েছেন। স্থানীয় LGBTQ তরুণদের সংগঠন ‘True Colors’-কে ৫,০০০ ডলার অনুদান দিয়েছেন। অফিসেই খুলেছেন একটি ফ্রি স্টোর, যেখানে কেউ চাইলে পণ্য দিয়ে বা নিয়ে যেতে পারে।

গভীর দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা
দক্ষিণ আমেরিকায় দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হওয়া এমবার বলেন, “ক্লাসের ভেতরেই প্রতিভাবান, মেধাবী মানুষের অভাব নেই। শুধু তাদের সামনে সুযোগ আসে না।” তার এই সাহসিকতার গল্প দেখিয়ে দেয়, চাইলেই ফেসবুক থেকেই গড়ে তোলা যায় এক সফল ব্যবসা।

মুমু

×