
ছবি: সংগৃহীত
প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোক হয়ে ওঠে এক মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। শরীরে পানি ও লবণের ঘাটতি, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও ক্লান্তি মিলিয়ে মানুষ পড়ে যায় বিপদের মুখে। এই সময়টায় পুরনো একটি ঘরোয়া উপাদান পেঁয়াজ আলোচনায় এসেছে।
শুধু রান্নায় স্বাদ বাড়ায় না, বরং প্রাচীনকাল থেকেই পেঁয়াজকে একধরনের প্রাকৃতিক ঠাণ্ডা ওষুধ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমের সময় নিয়মিত পেঁয়াজ খাওয়া ও প্রয়োগ করলে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
কেন পেঁয়াজ কার্যকর?
পেঁয়াজে থাকা প্রাকৃতিক তেল ও সালফার যৌগ শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক গ্রামীণ অঞ্চলে মানুষ এখনো পকেটে বা টুপির নিচে কাঁচা পেঁয়াজ রেখে বাইরে বের হন। এতে করে পেঁয়াজ থেকে নির্গত শীতল বাষ্প শরীরকে ঠান্ডা করতে কাজ করে।
ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা
গরমে ঘাম হওয়ার ফলে শরীর থেকে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান বেরিয়ে যায়। পেঁয়াজে রয়েছে এই ইলেকট্রোলাইটসমূহ, যা শরীরে খনিজের ঘাটতি পূরণ করে ও পানিশূন্যতা রোধ করে।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
বিশেষ করে লাল পেঁয়াজে এমন কিছু যৌগ থাকে, যা শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে। গরমকালে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, ফলে হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা কমে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে
পেঁয়াজে থাকে কোয়েরসেটিনসহ বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরকে অতিরিক্ত তাপের কারণে হওয়া কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এগুলো প্রদাহ কমায় এবং তাপঘাতের বিরুদ্ধে একটি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা দেয়।
হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা
উচ্চ তাপমাত্রায় হৃদপিণ্ড স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিশ্রম করে। পেঁয়াজে থাকা সালফার যৌগ রক্তচাপ কমায় ও রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে, যা গরমের সময় হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ কমায়।
ইমিউনিটি ও হজম শক্তি বাড়ায়
গরমে অনেক সময় হজম শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। পেঁয়াজে রয়েছে প্রিবায়োটিক ফাইবার ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
গরম থেকে রক্ষায় পেঁয়াজ যেভাবে ব্যবহার করবেন-
- গরমকালে প্রতিদিন সালাদে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
- বাইরে বের হলে পকেটে বা টুপির নিচে এক টুকরো পেঁয়াজ রাখলে তাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
- শরীরে অতিরিক্ত উত্তাপ অনুভব করলে পেঁয়াজ পেস্ট করে কপালে বা পায়ের তলায় লাগানো যেতে পারে।
তবে যাদের পেঁয়াজে অ্যালার্জি আছে বা পাকস্থলীতে সমস্যা হয়, তাদের অবশ্যই সতর্কভাবে গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তীব্র গরমে হিটস্ট্রোক এড়াতে পেঁয়াজের ব্যবহার নিঃসন্দেহে একটি সাশ্রয়ী, সহজলভ্য এবং কার্যকর পন্থা। আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি প্রাকৃতিক এই ঘরোয়া পদ্ধতিও হতে পারে গ্রীষ্মকালীন জীবন রক্ষাকারী কৌশল।
মুমু