
ছবিঃ সংগৃহীত
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠা। নানা ঘটনা আর পাল্টাপাল্টি অবস্থানের ভেতর দিয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মাঠ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বিরোধী দলগুলোর তীব্র অবস্থান, আসন্ন নির্বাচন কিংবা চলমান আন্দোলন—সবকিছু মিলিয়ে সাধারণ নাগরিকের মনে প্রশ্ন, আসলে কোন দিকে যাচ্ছে দেশের রাজনীতি?
৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করা হয়। এর মাঝে কেটে গেছে প্রায় নয় মাস। দেশের রাজনীতিতে গঠিত হয়েছে কয়েক ডজন দল। যে যার মতো নতুন দল গঠন করেছে। সর্বশেষ, গত এক মাস রাজনীতির প্রেক্ষাপট বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। ফেসবুক থেকে শুরু করে রাজনীতির মাঠ—সব জায়গাজুড়ে বর্তমান রাজনীতির ভবিষ্যৎ ভাবনা।
গত দুদিন ধরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে উঠেছে গুঞ্জন। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিরক্ত প্রধান উপদেষ্টা। অন্যদিকে দেশ সংস্কারের আগেই বিএনপির জাতীয় নির্বাচন চাওয়া নিয়েও রয়েছে নানা তর্ক-বিতর্ক। সবমিলিয়ে বেশ বিরক্ত প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভাবনা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের দেওয়া বক্তব্যের মাধ্যমে।
নাহিদ ইসলাম গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, তিনি ওইদিন সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে পারেন, এমন খবর পেয়েই তার সঙ্গে দেখা করেছেন উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন।’
এদিকে 'মার্চ ফর ড. ইউনূস' শিরোনামে এক কর্মসূচির আয়োজন করেছে একদল সমর্থক গোষ্ঠী। এই সমাবেশের মূল দাবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জাতীয় সরকার হিসেবে ঘোষণা করা এবং ড. ইউনূসকে অন্তত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ দেওয়া।
প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে কি ঘটবে?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুনর্গঠনের সুযোগ আইনে কতটা আছে, এই প্রশ্নে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন আইনজীবীরা।
আইনজীবীদের অনেকে বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে দলগুলোর সমর্থনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। ফলে এখন অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করলে কোনো সাংবিধানিক সংকট হবে না; তখন নতুন সরকার গঠনের প্রশ্ন আসবে।
তাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, অধ্যাপক ইউনূস চলে গেলে রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে দিতে পারেন, যে সরকার শুধু নির্বাচন করবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক পরিস্থিতিটা ব্যাখ্যা করেছেন ভিন্নভাবে। তিনি বলেন, আইনে কী বলা আছে, তা এখন বিবেচনার মধ্যে পড়ে না। কারণ ‘আইন অনুযায়ী কিছু হচ্ছে না।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত বছরের ডিসেম্বরে পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক বাতিল করেছে হাইকোর্ট। যে অংশটি বাতিল করা হয়েছে তার ফলে দেশের সংবিধানে আবারও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসার পথ তৈরি হয়েছে।
শাহদীন মালিক আরও বলেন, অধ্যাদেশ দিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করা যাবে না এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক বাতিল করে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর সুযোগ করা হলো, এই সংশোধনী করার ক্ষমতা তো সংসদ ছাড়া কারো নাই।
‘তাই, এখন জোড়াতালি দিয়ে চলতে হবে। এখন আর আইনের ভূমিকা নাই। আইন অনুযায়ী কিছু হচ্ছে না। সব আইনের বাইরে হচ্ছে। আইনের প্রশ্ন এখন অবান্তর,’ বলে মন্তব্য করেন এই আইনজীবী।
বিএনপি-জামায়াত বৈঠক
দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিএনপি এবং রাত ৮টায় জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
প্রেস উইং জানায়, বিএনপি ও জামায়াত দুই দলের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
এদিকে রাজনৈতিক দল দুটির সঙ্গে বৈঠকের আগে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ এক দফা নিজেরা বৈঠক করবে। আজ একনেকের নিয়মিত বৈঠকের পর উপদেষ্টা পরিষদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
গত ১৯ মে থেকে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক থেকে দলটির আমির জরুরি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান।
মারিয়া