
বাংলাদেশে জমি কেনাবেচা একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ন প্রক্রিয়া। সাধারণ মানুষ কিংবা বিনিয়োগকারীদের জন্য এই লেনদেন কখনো কখনো স্বপ্নপূরণের পথ, আবার কখনো প্রতারণার ফাঁদে পরিণত হয়। তাই জমির দলিল বৈধ কিনা তা যাচাই করা শুধু দরকারই নয়, বরং একান্ত প্রয়োজন। ভুল তথ্য, জাল দলিল বা আইনি জটিলতা থেকে বাঁচতে একজন ক্রেতার সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপই হতে পারে সুরক্ষার প্রধান হাতিয়ার।
জমির দলিল কেন গুরুত্বপূর্ণ?
জমির দলিল হলো মালিকানার বৈধ প্রমাণপত্র। এটি দলিল অফিসে রেজিস্ট্রার কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং এতে জমির মালিকানা, পরিমাণ, দাগ-খতিয়ান নম্বরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। বৈধ দলিল ছাড়া জমির মালিকানা দাবি করা আইনের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য। ফলে জমি কেনার পূর্বে দলিলের সঠিকতা যাচাই করা বাধ্যতামূলক।
দলিল যাচাইয়ের মূল ধাপসমূহ
প্রথমত, দলিলের মূল কপি যাচাই করুন। সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর ও সরকারি সিল নিশ্চিত করতে হবে। দলিলের প্রতিটি পাতায় স্ট্যাম্প সঠিকভাবে বসানো আছে কিনা তাও দেখে নিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, দলিলে উল্লিখিত মালিকের নাম, ঠিকানা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর প্রভৃতি তথ্য সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস বা অনলাইন পোর্টালের রেকর্ডের সাথে মিলিয়ে নিতে হবে।
তৃতীয়ত, আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি অভিজ্ঞ আইনজীবী কেবলমাত্র দলিলের সত্যতা যাচাই-ই নন, বরং যেকোনো আইনি ঝুঁকি চিহ্নিত করতেও সহায়তা করতে পারেন।
চতুর্থত, বর্তমান সময়ে সরকারি ও বেসরকারি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম (যেমন: e-porcha.gov.bd বা land.gov.bd) ব্যবহার করে সহজেই দলিল ও খতিয়ান যাচাই করা যায়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কোনও প্রকার সন্দেহজনক তথ্য থাকলে লেনদেন থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
দলিল যাচাইয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর
ক. দলিলে সব প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন মালিকের নাম, ঠিকানা, জমির অবস্থান, পরিমাণ, মৌজা, উপজেলা, জেলা উল্লেখ আছে কিনা তা খুঁটিয়ে দেখা দরকার।
খ. সঠিক স্ট্যাম্প ব্যবহার হয়েছে কিনা এবং দলিলটি যথাযথভাবে রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রি হয়েছে কিনা নিশ্চিত করতে হবে।
গ. দলিলে মালিকানার উৎস (যেমন উত্তরাধিকার, ক্রয়, দান) স্পষ্টভাবে লেখা আছে কিনা তা দেখা জরুরি।
ঘ. জমির বাস্তব অবস্থা,জমিটি দখলে আছে কিনা, কোন মামলা বা ঋণের মধ্যে নেই কিনা,তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখা উচিত।
ঙ. দলিলটি কবে তৈরি হয়েছে তাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ১৯৭৬ সালের পূর্ববর্তী দলিলগুলো অতিরিক্ত যাচাইয়ের দাবি রাখে।
চ. জমি যদি একাধিক মালিকের নামে থাকে, তাহলে সবার সম্মতিসহ স্বাক্ষর ছাড়া বিক্রি করা যাবে না।
ছ. দলিলের সঙ্গে মিউটেশন (নামজারি) সম্পন্ন হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা জরুরি।
জ. জাল দলিল চিহ্নিত করার জন্য বানান ভুল, অস্পষ্ট তথ্য, অস্বাভাবিক অসঙ্গতি এবং ভুয়া স্বাক্ষরের প্রতি সচেতন থাকতে হবে।
ঝ. দলিল যাচাইয়ের জন্য আপনি সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, ভূমি অফিস এবং অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করতে পারেন। আইনি সহায়তা পেতে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করাই সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি।
জমি কেনার মতো বড় সিদ্ধান্তে কোনো ভুলের সুযোগ নেই। একটি ছোট ভুল ভবিষ্যতে বড় আর্থিক ও আইনি ক্ষতির কারণ হতে পারে। দলিল যাচাইয়ের প্রতিটি ধাপ সচেতনভাবে অনুসরণ করুন এবং অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিতে কখনোই দ্বিধা করবেন না। সতর্কতা, সচেতনতা এবং সঠিক আইনি জ্ঞানের মাধ্যমেই নিশ্চিত হতে পারে আপনার জমি কেনার সিদ্ধান্তের সফল পরিণতি।
সূত্র:https://tinyurl.com/4jyt4886
আফরোজা