
যশোরের চৌগাছা উপজেলার আর্সেনিকপ্রবণ মাড়ুয়া গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া জাপানের উদ্ভাবিত ‘থ্রিএফফোরডি’ (৩FF4D) সেচ পদ্ধতিতে ধান চাষে সফলতা পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। এই প্রাকৃতিক ও পর্যায়ক্রমিক সেচ কৌশলের মাধ্যমে আর্সেনিকের মাত্রা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি সেচের পানি সাশ্রয় হচ্ছে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত।
গত দুই দশকে আর্সেনিকজনিত রোগে এ গ্রামে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৩০ জন, আক্রান্ত বহু। খাবার পানিতে আর্সেনিক প্রতিরোধে উদ্যোগ থাকলেও, সেচের মাধ্যমে তা ফসলেও ছড়িয়ে পড়ছিল। এই প্রেক্ষাপটে জাপানের ন্যাশনাল এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নারো) উদ্ভাবিত সেচ পদ্ধতি এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
প্রথমবারের মতো থ্রিএফফোরডি পদ্ধতিতে ধান চাষ করেন মাড়ুয়া গ্রামের তৌহিদুল ইসলাম নয়ন। তিনি জানান, পাশাপাশি দু’টি জমির একটিতে প্রচলিত ও অন্যটিতে থ্রিএফফোরডি পদ্ধতিতে ধান চাষ করেন। এতে নতুন পদ্ধতিতে ফলন বেশি এবং খরচও কম হয়েছে।
ফসলেও যে আর্সেনিক থাকতে পারে, তা জানতেন না স্থানীয় বাসিন্দা ও আর্সেনিক আক্রান্ত জব্বার আলী। তিনি বলেন, “নয়নের জমিতে এই পদ্ধতিতে ফলন ভালো হয়েছে, সেচও কম লেগেছে। আমিও এবার এই পদ্ধতিতে চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এই প্রকল্পের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয় জাইকার (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) সহায়তায়, ‘নিরাপদ ও পুষ্টিকর ধান উৎপাদনের জন্য প্রজনন ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায়।
মাঠ সমন্বয়ক আবু হাসান জানান, “আর্সেনিক সহনশীল খাদ্য উৎপাদনই আমাদের লক্ষ্য। প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষ করলে চালেও বিষক্রিয়া দেখা যায়, যা এই পদ্ধতিতে অনেকাংশে হ্রাস পাচ্ছে।”
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, “এ পদ্ধতিতে অজৈব আর্সেনিকের মাত্রা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায় এবং সেচের পানির ব্যবহার ৬৫-৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে, ফলে উৎপাদন খরচও হ্রাস পায়।”
জাপানের নারো ইনস্টিটিউটের গবেষক কেন নাকামুরা জানান, “ধানের শীষ বের হওয়ার ৩ সপ্তাহ আগে এবং শীষ বের হওয়ার ৪ সপ্তাহ পরে সেচ দেওয়ার নিয়মে জমিতে পানির গভীরে জমে থাকা আর্সেনিক উপরের অংশে উঠতে পারে না।”
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টাকিহিরো ক্যামিয়া বলেন, “এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত ধানে আর্সেনিকের মাত্রা মাত্র ০.২ শতাংশ, যা স্বাস্থ্যঝুঁকির সীমার নিচে।”
চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসাইন বলেন, “উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি সম্প্রসারণে কাজ চলছে। এটি পুরো আর্সেনিকপ্রবণ এলাকায় নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক হবে।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা ইসলাম জানান, “এই উদ্যোগকে সফল করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।”
নুসরাত