ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রতিশ্রুতি এসেছে আগুনের মতো, কিন্তু ফায়ার সার্ভিস আসেনি একবারও!

বেলাল হোসেন রিয়াজ, নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ১৫:০০, ২৪ মে ২০২৫

প্রতিশ্রুতি এসেছে আগুনের মতো, কিন্তু ফায়ার সার্ভিস আসেনি একবারও!

ছবি: সংগৃহীত।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ফায়ার সার্ভিস না থাকায় বছরে আগুনে পুড়ছে কোটি টাকার সস্পদ। উপজেলা প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৪২ বছরেও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে প্রতি বছর আগুনে পুড়ে কোটি-কোটি টাকার সম্পদ ছাই হচ্ছে। 

সরকার আসে সরকার যায় ভাগ্য বদল হয়নি নাঙ্গলকোটের ৬ লক্ষ লোকের। ক্ষমতার পালা বদলে রাজনীতিবিদদের আশ্বাস ছিল এক মাত্র ভরসা, রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে ও তাদের অবহেলায় শুধুমাত্র ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলার বিভিন্ন বাজার গুলো বা বাসাবাড়িতে আগুন লাগলে পার্শ্ববর্তী লাকসাম উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আগুনে সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। আগুনে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নাঙ্গলকোটে উপজেলায় একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন জরুরি বলে মনে করেন জনসাধারণ।

নাঙ্গলকোট উপজেলা একটি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এতে বসবাস করেন অন্তত ছয় লাখ জনগোষ্ঠি। এ উপজেলায় বিভিন্ন পর্যায়ের শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা অফিস, হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি অফিস, ছোট-বড় অসংখ্য হাট-বাজার এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন হাট-বাজারে রয়েছে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, কেরোসিনসহ তৈলজাতীয় পদার্থের মজুদ ও বিক্রয় দোকান। ফলে ওই সকল প্রতিষ্ঠান এবং বাজারসমূহ সর্বদায় অগ্নিকা-ের চরম ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন নাঙ্গলকোবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। কিন্তু বিগত দিনের জনপ্রতিনধিগণ প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে এর আলোর মুখ দেখছেনা এলাকাবাসী।

জানা যায়, চলতি বছরের নাঙ্গলকোট বাজারের কাজী মার্কেটের একটি গার্মেন্টস দোকানে আগুন লাগে। এক পর্যায়ে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা টের পেয়ে তাৎক্ষণিক আগুন নেভাতে সক্ষম হন। গত ১২ মার্চ সন্ধ্যা দিকে উপজেলার মৌকরা ইউনিয়নের শিয়ালীমোড়চৌ পূর্বপাড়া গ্রামের হাজি বাড়ির আবুল হাশেমের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে আবুল হাশেমের বসতঘর, রান্নাঘর ও গোয়ালঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এসময় ঘরের আলমারিতে রক্ষিত নগদ ৪ লাখ টাকা, ৪ ভরি স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। লাকসাম থেকে ফায়ার সার্ভিস আসার পূর্বে এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এর আগে সম্পূর্ণ বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গত ৯ এপ্রিল সন্ধ্যা ৮টার দিকে উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের চার সহোদর ভাই মানিক, হাসান, হোসেন ও রিপনের বসতঘর আগুণে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।

নাঙ্গলকোট বাজার ব্যবসায়ী মো: সাফায়েত হোসেন বলেন, “ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় অগ্নিকান্ডে কোটি কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে যাচ্ছে। তাই এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এখানে একটি ফায়ারসার্ভিস স্টেশন স্থাপন করা খুবই জরুরী। কিন্ত বিগত দিনে এখানে জনপ্রতিনিধি থাকলেও এখানে একটি ফায়ারসার্ভিস স্থাপন করতে পারেন নাই।” 

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিপেন্স কুমিল্লা জেলা সহকারী পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, “জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার অনুসরণের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করা হবে।”

মিরাজ খান

×