ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বন্যায় ডুবেছে কুড়িগ্রামের হাজার হাজার একর ফসল, কৃষকের মুখে ক্ষতির বিষাদ

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ২৪ মে ২০২৫; আপডেট: ১৫:৪৩, ২৪ মে ২০২৫

বন্যায় ডুবেছে কুড়িগ্রামের হাজার হাজার একর ফসল, কৃষকের মুখে ক্ষতির বিষাদ

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় কয়েকদিন ধরে অবিরাম ভারি বর্ষণে মাঠ-ঘাট, খাল-বিল পানিতে থৈ থৈ করছে। ডুবে গেছে উঠতি ইরি-বোরো ধানক্ষেতসহ চরাঞ্চলের বাদাম, পাট ও রবিশস্য। নিম্নাঞ্চলে ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দীর্ঘদিন পানির নিচে থাকার কারণে ধান গাছগুলোতে পচন ধরেছে। তবুও ধানের আশায় অনেক কৃষক কোমড় পানিতে নেমে শ্রমিকদের দিয়ে ধান কাটা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ধান-চালের পাশাপাশি ধানের খড়েও পচনের কারণে গো-খাদ্যের সংকট গড়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।

অপরদিকে তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে জমে থাকা পানিতে ডুবে যাওয়া ক্ষেত থেকে অপরিপক্ক বাদাম ও মরিচ তুলছেন কৃষকরা। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞরাও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিতে থৈ থৈ করছে। উঠতি ইরি-বোরো ধানক্ষেত পানিতে ডুবে পড়ে। কৃষকরা বলছেন, কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টির কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষক মানিক মিয়া (৪৫) জানান, “৫ একর জমিতে ইরি-বোরো ধান লাগিয়েছি। ফলন ভালো ছিল, কিন্তু এখন পানির নিচে ডুবে গেছে। শ্রমিকও পাওয়া কঠিন।”

একই এলাকার হান্নান বলেন, “২ একর জমির ধান পানির নিচে রয়েছে। শ্রমিক না পেয়ে নিজেই কোমড় পানিতে নেমে ধান কাটছি।”

আঃ আউয়াল বলেন, “অত্যন্ত দামে শ্রমিক নিয়ে পানির নিচের ধান কেটে নিচ্ছি। অনেক ধান পড়ে গেছে।”

বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চরাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের বাদাম, মরিচসহ ফসল তোলার চেষ্টা করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি ইরি-বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ২শ ৪৫ হেক্টর, অর্জিত হয়েছে ১২ হাজার ২শ ৫০ হেক্টর। পাট ৩৯২ হেক্টর, চিনাবাদাম ১৭৫ হেক্টর, মরিচ ৩ হেক্টর, শাক-সবজি ৫ হেক্টর চাষ হয়েছে।

কিন্তু মাঝারি ও ভারি বর্ষণের কারণে নিম্নাঞ্চল, খাল-বিলের উঠতি ইরি-বোরো ধান ও রবিশস্য পানিতে তলিয়ে গেছে।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ গ্রামের কৃষকরা পানিতে ডুবে যাওয়া চিনাবাদাম ও কাউন উদ্ধার করার চেষ্টা করছেন।

অনেকে অভিযোগ করছেন, ধারদেনা করে ফসল চাষ করেছিলেন, কিন্তু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কিভাবে দেনা পরিশোধ করবেন জানেন না।

রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুরন্নাহার সাথী বলেন, “ভারি বর্ষণের কারণে নিম্নাঞ্চলগুলো ডুবে গেছে। সাময়িকভাবে কিছু ক্ষতি হলেও বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা কম।”

কৃষকরা দ্রুত ক্ষতি নিরূপণ ও সহযোগিতার আশায় রয়েছেন।

মিমিয়া

×