ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দেশের অগ্রযাত্রা

-

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ২৪ মে ২০২৫

দেশের অগ্রযাত্রা

সম্পাদকীয়

দক্ষিণ কোরিয়ার অগ্রগতির পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ এবং দক্ষ জনশক্তি। বাংলাদেশেরও তেমন সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, এই দেশের তরুণরাও অত্যন্ত মেধাবী এবং পরিশ্রমী। বৃহস্পতিবার রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘কোরিয়াজ কারেন্ট সিচুয়েশন ইনক্লুডিং ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশনশিপ উইথ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক এমন সম্ভাবনার কথা ব্যক্ত করেছেন, যা আশাব্যঞ্জক। 
দক্ষিণ কোরিয়া বর্তমানে এশিয়া তথা বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ, যার অর্থনীতির আকার ১.৮৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশটির জনগণের মাথাপিছু আয় ৩৭,৬৭২ মার্কিন ডলার। কয়েক দশকের ব্যবধানে দেশটি অনুন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশের কাতারে স্থান করে নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিকে ‘মিরাকল ইন দ্য হান রিভার’ বলে অভিহিত করা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশে আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে বিশ্বখ্যাত কোরিয়ান কোম্পানি ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংয়ের নেতৃত্বে কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের একটি দল কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শনসহ বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে গিয়েছে।

যেখানে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক, লজিস্টিকস, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের কয়েকটি কোরিয়ান কোম্পানির প্রতিনিধি ছিলেন। তাদের কাছ থেকে এসেছে বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি। ইয়াংওয়ান করপোরেশনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে একটি টেক্সটাইল ও ফ্যাশন কলেজ স্থাপন করার প্রস্তাব এসেছে। এটি বাংলাদেশকে শীর্ষ টেক্সটাইল হাবে পরিণত করতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করবে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়লে দুই দেশই উপকৃত হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শুধু কূটনৈতিক পর্যায়ে নয়, উন্নয়ন প্রকল্পেও দৃশ্যমান। বর্তমানে কোরিয়ান সরকারের সহযোগিতা সংস্থা কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল  কো-অপারেশন এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিবেশ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। 
দক্ষিণ কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদার। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জনশক্তি রপ্তানি, উন্নয়ন সহায়তা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে এই সম্পর্কের গভীরতা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া প্রযুক্তি উদ্ভাবন র‌্যাংকিংয়ে বর্তমান বিশ্বে প্রথম সারিতে রয়েছে।

দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী মডেল হিসেবে বিবেচিত। তাই দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত স্থানান্তর দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা।

×