ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রক্তদান মানবতার নিঃশব্দ প্রতিজ্ঞা

মো: মুরসালিন চৌধুরী, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, হাটহাজারী,চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ২৪ মে ২০২৫; আপডেট: ০০:১৪, ২৫ মে ২০২৫

রক্তদান মানবতার নিঃশব্দ প্রতিজ্ঞা

“তোমার এক ব্যাগ রক্ত, কারো জীবনের শেষ আশার আলো”—এই কথাটুকু আজ শুধু স্লোগান নয়, বরং মানবতার এক জীবন্ত চিত্র। রক্তদান একটি নির্ভেজাল মানবিক কাজ, যেখানে দাতা জানেন না, তাঁর রক্ত কোথায় যাচ্ছে, কাকে বাঁচাচ্ছে; কিন্তু তবুও তিনি নিঃস্বার্থভাবে তা দিয়ে যান—কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, একজন মানুষের জীবন বাঁচানো মানেই পুরো একটি পরিবারকে বাঁচানো।

রক্তদান: কেবল চিকিৎসা নয়, হৃদয়ের একটি দান
বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭,০০০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। দুর্ঘটনা, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া, সন্তান প্রসবসহ অসংখ্য জরুরি মুহূর্তে প্রয়োজন পড়ে এই একফোঁটা জীবনদায়ী রক্তের। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই চাহিদার বড় একটি অংশ এখনো আত্মীয়স্বজন বা স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতাদের মাধ্যমে পূরণ হয়।
একজন স্বেচ্ছায় রক্তদাতা কখনো কোনো প্রতিদান আশা করেন না। তাঁর একমাত্র চাওয়া—একটি জীবন যেন হারিয়ে না যায় রক্তের অভাবে।

সমাজে নিঃশব্দ বীরেরা:
রক্তদাতারা আমাদের সমাজের এমন কিছু মানুষ, যারা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন না, কিন্তু মানবতার যুদ্ধে তাঁরা আছেন প্রথম সারিতে। কেউ হয়তো মাসে একবার অফিস ছুটি নিয়ে ছুটে যান হাসপাতালে, কেউ রাত ৩টায় ফোন পেয়ে ব্যাগ হাতে পৌঁছে যান জরুরি বিভাগে। এই নিঃশব্দ বীরেরা অসংখ্য মানুষকে ফিরিয়ে আনেন মৃত্যুর মুখ থেকে।
চট্টগ্রামের মোহাম্মদ হাসান নামের একজন তরুণ বলেন, “আমি রক্ত দিলে ক্লান্ত হই না, বরং এক ধরনের মানসিক তৃপ্তি পাই—জানি, কেউ আজ একটু বেশি দিন বাঁচবে।”

ভুল ধারণা ও সচেতনতার ঘাটতি:
অনেকেই এখনো মনে করেন, রক্তদান করলে শরীর দুর্বল হয় বা অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, একজন সুস্থ মানুষ প্রতি ৪ মাস অন্তর নিরাপদে রক্তদান করতে পারেন। বরং এতে শরীর আরও সুস্থ থাকে এবং নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয়।
প্রয়োজন শুধুই সঠিক তথ্য ও সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া, বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে।

রক্তদান আন্দোলন ও প্রযুক্তির ব্যবহার:
বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই রক্তদাতার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন রক্তদাতা সংগঠন যেমন—সন্ধানী, বাঁধন, রক্ত, রেড ক্রিসেন্ট ইত্যাদি সারা দেশে রক্তদানের সংস্কৃতি গড়ে তুলছে। পাশাপাশি “ব্লাড ব্যাংক” প্রতিষ্ঠা ও মোবাইল রক্তদানের কার্যক্রমও দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।

সাব্বির

×