ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঘুমের ঘাটতি কি হার্ট অ্যাটাক ডেকে আনে?

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২৫ মে ২০২৫

ঘুমের ঘাটতি কি হার্ট অ্যাটাক ডেকে আনে?

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিনের ঘুম মানেই শুধু বিশ্রাম নয়, এটা আমাদের সুস্বাস্থ্য, কর্মক্ষমতা ও মানসিক স্থিতির মূল চাবিকাঠি। অথচ আজকের দিনে ঘুম যেন হয়ে উঠেছে বিলাসিতার নাম।

ঘুম মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। ঘুম না হলে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা কর্মজীবন—প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিঘ্ন ঘটে। কিন্তু ঘুম নিয়ে মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের সমস্যা সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে—পরিমাণগত সমস্যা (ঘুম কম হওয়া) এবং গুণগত মানের সমস্যা (ঘুম ভেঙে যাওয়া বা অশান্ত ঘুম)।

রোগীরা সাধারণত তিনটি বড় ধরণের সমস্যায় ভোগেন:

  • প্রথমত, ঘুমাতে যেতে দেরি হয়, বিছানায় ছটফট করেন।
  • দ্বিতীয়ত, মাঝরাতে বা খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায়।
  • তৃতীয়ত, ফ্রাগমেন্টেড স্লিপ—মানে ঘুম হয়েও বারবার ভেঙে যায়।

এই ধরনের সমস্যা যদি প্রতি সপ্তাহে তিন দিন এবং তিন মাস ধরে চলতে থাকে, তাহলে তাকে ‘ইনসমনিয়া’ বা ঘুমের রোগ বলা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য। আর আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, হৃদরোগীদের অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। কিন্তু বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়, তারা চাইলেও এই ঘুম পূরণ করতে পারেন না। অন্যদিকে তরুণ প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল স্ক্রিনে আটকে থেকে রাতে ঘুমাতে দেরি করে ফেলছে।

ঘুম না হলে কী হয়?
ঘুম না হলে শরীরে কর্টিসল ও অন্যান্য স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়। এর ফলে:

  • রক্তে চিনি (সুগার) বেড়ে যেতে পারে
  • ওজন বৃদ্ধি পায়
  • উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়
  • হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে
  • অর্থাৎ, ঘুম না হওয়া মানেই ডায়াবেটিস, হাইপ্রেশার ও হার্টের ঝুঁকি একসঙ্গে বেড়ে যাওয়া।

ঘুমের সমস্যা কেন হয়?
ঘুমের সমস্যার পেছনে দুটি প্রধান কারণ থাকে:

  • প্রাইমারি ইনসমনিয়া: যার নির্দিষ্ট কোনো কারণ পাওয়া যায় না।
  • সেকেন্ডারি ইনসমনিয়া: যা হয় মানসিক বা শারীরিক অসুস্থতার কারণে।

মানসিক সমস্যার মধ্যে ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, টেনশন, মাদকাসক্তি এবং বিভিন্ন সাইকিয়াট্রিক ডিজঅর্ডার (যেমন: স্কিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার) উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে শারীরিক সমস্যার মধ্যে হার্টের রোগ, ক্যান্সার, এজমা, মাথাব্যথা ইত্যাদি ঘুমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

ঘুমের ওষুধ: ভয় না সচেতনতা?
ঘুমের ওষুধ নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা ভুল ধারণা রয়েছে। সাধারণত রোগীরা চারটি কারণে ঘুমের ওষুধ বন্ধ করে দেন:

  • ওষুধে আসক্তি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
  • ভবিষ্যতে ওষুধ ছাড়া ঘুম না হওয়ার ভয়
  • সারাদিন ঘুমিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা
  • কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হওয়ার চিন্তা

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ডোজে ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুমের ওষুধ খেলে আসক্তির ঝুঁকি থাকে না। বরং সঠিক ব্যবস্থাপনায় এটি টেনশন, উদ্বেগ এমনকি ডায়াবেটিস ও প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

যেমন একজন রোগী প্রতিদিন ডায়াবেটিস বা হার্টের ওষুধ খান, ঠিক তেমনি একজন ইনসমনিয়া আক্রান্ত রোগীর জন্য ঘুমের ওষুধ প্রয়োজনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শর্ত একটাই—চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চলা এবং নিজের সিদ্ধান্তে ওষুধ শুরু বা বন্ধ না করা।

সমাধান: ঘুমের অভ্যাসে শৃঙ্খলা
ঘুমের জন্য প্রথমে চেষ্টা করা উচিত কোনো ওষুধ ছাড়াই ঘুম আনার। একে বলে স্লিপ হাইজিন বা ঘুমের স্বাস্থ্যকর রুটিন। যেমন:

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও উঠা
  • ঘুমের আগে মোবাইল বা স্ক্রিন টাইম কমানো
  • ক্যাফেইন বা মদ্যপান থেকে বিরত থাকা
  • রাতের খাবার হালকা রাখা
  • ঘুমানোর আগে ৩০ মিনিট শান্ত পরিবেশে থাকা

এই নিয়মগুলো মেনে চলেও যদি ঘুম না আসে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নেওয়া নিরাপদ এবং অনেক ক্ষেত্রেই জরুরি।

ঘুম কোনো বিলাসিতা নয়—এটা আমাদের শরীরের প্রয়োজন। শুধু বিশ্রাম নয়, ঘুম আমাদের মন, মস্তিষ্ক, হৃদয় ও হরমোনের সঠিক কার্যক্রম নিশ্চিত করে। তাই যদি ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে, তবে একে অবহেলা না করে সচেতন হতে হবে। আর ওষুধের নাম শুনলেই আতঙ্কিত না হয়ে বরং সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। কারণ ঘুম শুধু চোখের জন্য নয়, সুস্থ জীবনের জন্যও অপরিহার্য।

এসএফ

×