ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পা ও পায়ের পাতায় যে ৫টি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝবেন আপনার কিডনি বিপদে!

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ২৪ মে ২০২৫; আপডেট: ১৪:২৬, ২৪ মে ২০২৫

পা ও পায়ের পাতায় যে ৫টি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝবেন আপনার কিডনি বিপদে!

দেহের ভেতরের অসুস্থতার অনেক সময় প্রকাশ ঘটে আমাদের পা-এ। হাঁটা, দাঁড়ানো কিংবা ওজন বহনের বাইরেও পা যে দেহের গভীর সংকেত বহন করে, তা আমরা প্রায়ই অগ্রাহ্য করি। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। শরীরের এই পরিশ্রান্ত ফিল্টার যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন সে তার সংকেত পাঠায় নিচের অঙ্গগুলোতে বিশেষ করে পা ও পায়ের পাতায়।

এসব লক্ষণ সাধারণত তেমন নাটকীয় নয় বরং নিরীহ ক্লান্তি, বয়সজনিত ব্যথা, কিংবা ভুল ভঙ্গিমা হিসেবে মনে হতে পারে। তবে সময়মতো বুঝে উঠলে, তা বড় বিপদ এড়াতে সহায়তা করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনি সমস্যার প্রাথমিক ধাপে পায়ে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়, তা অবহেলা না করে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। নিচে তুলে ধরা হলো পা ও পায়ের পাতায় দেখা দেওয়া কিডনি সমস্যার পাঁচটি নীরব সংকেত।

১. পায়ের গোড়ালিতে নরম ফোলা ভাব
যদি দিনের শেষে পায়ের গোড়ালিতে নরম ফোলাভাব অনুভব করেন, বিশেষ করে মোজা খোলার পর গভীর দাগ দেখা যায়, তাহলে তা কিডনি অস্বাস্থ্যের ইঙ্গিত হতে পারে।কিডনির একটি প্রধান কাজ হলো শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ ও পানি বের করে দেওয়া। কিডনি যখন এই ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন সেই অতিরিক্ত তরল পা ও গোড়ালিতে জমতে শুরু করে।

যদিও গরম আবহাওয়া বা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেও এমন হতে পারে, তবে যদি এটি নিয়মিত ঘটে এবং কোনও সুস্পষ্ট কারণ না থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

২. চুলকানি, অথচ ত্বকে নেই কোনো র‍্যাশ বা শুষ্কতা
অনেকেই পায়ের পেশিতে বা হাঁটুর নিচে অকারণ চুলকানি অনুভব করেন, কিন্তু ত্বকে থাকে না কোনো দৃশ্যমান সমস্যা।কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তে বর্জ্য পদার্থ জমে যায়। এই বিষাক্ত বর্জ্য শরীর থেকে বের না হলে তা ত্বকের নিচে জমে গিয়ে চুলকানির সৃষ্টি করে।

এই অবস্থা পরিচিত ইউরেমিক প্রুরিটাস নামে, যা কিডনি অকার্যকারিতার একটি পরিচিত উপসর্গ। এটি ত্বকের শুষ্কতা নয়, বরং শরীরের ভেতরের সংকেত।

৩. রাতে পায়ের পেশিতে খিঁচুনি
রাতে বা বিশ্রামের সময় হঠাৎ পায়ের পেশিতে খিঁচুনি বা টান লাগার অনুভব অনেকেই করেন।পেশির সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে প্রয়োজন হয় সুনির্দিষ্ট মাত্রার পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও সোডিয়ামের। কিডনি ঠিকভাবে রক্ত পরিশোধন করতে না পারলে এই খনিজের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে পায়ে খিঁচুনি দেখা দেয়।
প্রাথমিক স্তরের ক্রনিক কিডনি ডিজিজ-এ পেশিতে এমন অস্বাভাবিক খিঁচুনির ঘটনা অনেক সময়ই ঘটে থাকে।

৪. পায়ের পাতায় বা আঙুলে ত্বকের রঙে হালকা পরিবর্তন
আঘাত না লাগলেও পায়ের পাতায় বা আঙুলে যেন হালকা নীলচে বা গাঢ় ছায়া দেখা যাচ্ছে?কিডনি ও রক্তসঞ্চালনের মধ্যে রয়েছে সরাসরি সম্পর্ক। কিডনি দুর্বল হলে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে পায়ের নির্দিষ্ট অংশে অক্সিজেনের প্রবাহ কমে যেতে পারে। এটি ত্বকে ছায়াময় বা বিবর্ণ আভা সৃষ্টি করে।

এই পরিবর্তন অনেক সময় খুব সূক্ষ্ম থাকে এবং অনেকে একে সাধারণ রঙ পরিবর্তন মনে করে এড়িয়ে যান। কিন্তু এটি হতে পারে কিডনি সমস্যার সূক্ষ্ম ইঙ্গিত।

৫. পায়ের পাতায় অব্যক্ত ঝিঁঝিঁ বা অবশভাব
চেয়ারে বসা অবস্থায় পায়ের পাতায় হঠাৎ অস্বাভাবিক ঝিঁঝিঁ ভাব বা অবশতা অনুভব করলেও, অনেক সময় আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিই না।
কিন্তু কিডনি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য ও বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে এটি স্নায়ুর সংবেদনশীলতা ঠিক রাখে।

যদি কিডনি এই কাজগুলো ঠিকভাবে করতে না পারে, তবে প্রথমে ছোট ছোট স্নায়ু গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাতেই দেখা দেয় পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি যা সাধারণত ডায়াবেটিসে হয়, কিন্তু কিডনি সমস্যাতেও দেখা দিতে পারে।এমন সামান্য অস্বস্তিই হতে পারে শরীরের প্রথম সতর্কবার্তা।

শরীর আমাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা বলে, কিন্তু আমরা কি তা শুনি?কিডনি যেমন নীরবে কাজ করে, তেমনি বিপদের আগাম বার্তাও পাঠায় খুব সূক্ষ্মভাবে। পা ও পায়ের পাতায় এই পরিবর্তনগুলো নিয়মিত দেখা দিলে অবহেলা না করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কিডনি রোগের বড় বিপদ হলো, এটি ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। কিন্তু একটু সচেতন হলেই আপনি নিজেই হয়ে উঠতে পারেন আপনার শরীরের প্রথম চিকিৎসক।স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা মানে কেবল রোগ নিরাময় নয়, বরং আগে থেকে সতর্ক হয়ে সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা।আপনার পা হয়ত শুধু শরীর বহন করছে না, বহন করছে কিডনির নীরব ভাষাও। সেই ভাষা শুনুন, বুঝুন, এবং আগেই ব্যবস্থা নিন।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/2yssmtwh

আফরোজা

×