
ডায়াবেটিস শুধু একটি রোগ নয়, এটি এখন হয়ে উঠেছে নীরব ঘাতক। আধুনিক জীবনযাপনের ব্যস্ততা, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের অভাব ও মানসিক চাপে দিনকে দিন বাড়ছে টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। অনেক সময় দিনের বেলায় শরীর স্বাভাবিক মনে হলেও, ঘুমের সময় আমাদের দেহ একাধিক সতর্ক সংকেত দিতে থাকে যেগুলো উপেক্ষা করা মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, বিশ্বে প্রতি ১১ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশেও এই সংখ্যা দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ঘুমের মধ্যে শরীরের কিছু অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত।
চলুন দেখে নিই, ঘুমের সময় কোন লক্ষণগুলো হতে পারে টাইপ-টু ডায়াবেটিসের পূর্বাভাস:
১. ঘুমিয়েও যেন শরীর ক্লান্ত-অবসন্ন
পর্যাপ্ত ঘুমের পরও যদি সকালে উঠে শরীর ভারী লাগে, দুর্বলতা বা অলসতা ঘিরে ধরে, তাহলে তা ইনসুলিন প্রতিরোধজনিত সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। শরীর যদি যথাযথভাবে গ্লুকোজ ব্যবহার না করতে পারে, তাহলে শক্তির ঘাটতি দেখা দেয় এবং সেটা ঘুম থেকে উঠে ক্লান্তির মাধ্যমেই বোঝা যায়।
২. রাতে অতিরিক্ত ঘাম
অনেকেই রাতে ঘেমে অস্থির হয়ে ওঠেন বা সকালে উঠে দেখেন বিছানা ভিজে গেছে। হাইপোগ্লাইসেমিয়া অর্থাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে গেলে এমনটা হতে পারে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা।
৩. বারবার প্রস্রাব হওয়া
রাতের বেলায় ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণে বারবার ঘুম ভেঙে যায়? সাবধান! এটি হতে পারে ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ। শরীরে যখন অতিরিক্ত গ্লুকোজ জমে, তখন তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে শরীর বাড়তি প্রস্রাব তৈরি করে। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
৪. ঘুমের মধ্যে তীব্র পিপাসা
রাতে একাধিকবার পানি খাওয়ার প্রয়োজন হয় বা ঘুম ভেঙে মুখ শুকিয়ে যায়? ডায়াবেটিসের কারণে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে, ফলে তীব্র পিপাসা অনুভূত হয়। এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।
৫. হাত-পায়ে ঝিমঝিম বা অসাড়ভাব
ঘুমের মধ্যে হাত-পায়ে ঝিমুনি, অসাড়তা বা পিন চুঁচোনোর মতো অনুভূতি—এসব হতে পারে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির লক্ষণ। এটি ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ুর ক্ষতি, যা সময়মতো চিকিৎসা না করলে ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
সতর্ক থাকুন, অবহেলা নয়
চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের লক্ষণ নিয়মিত দেখা দিলে দেরি না করে রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। কারণ, ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার পর যত দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, ততই কমে জটিলতার ঝুঁকি। চোখ, কিডনি, স্নায়ু ও হৃদযন্ত্রে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি ঠেকাতে সচেতনতা জরুরি।
কীভাবে রক্ষা পাবেন?
- নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কম।
- প্রতিবার ঘুমের পর শরীরের অনুভূতি খেয়াল করুন।
মনে রাখবেন, ঘুম শুধু বিশ্রামের সময় নয়, শরীরের ‘সিগন্যাল’ বোঝারও সময়। তাই ঘুমে পাওয়া বার্তাগুলোকে হালকাভাবে না নিয়ে, সময়মতো সতর্ক হোন এবং সুস্থ থাকুন।
মিমিয়া