ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মরিশাসের কাছে চাগোস দ্বীপপুঞ্জ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের

প্রকাশিত: ১৩:০১, ২৪ মে ২০২৫

মরিশাসের কাছে চাগোস দ্বীপপুঞ্জ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের

ছবি:সংগৃহীত

অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে নিয়ন্ত্রণে রাখা ভারত মহাসাগরের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ চাগোস দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা মরিশাসের হাতে তুলে দিচ্ছে যুক্তরাজ্য। বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য ও মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীরা এই ঐতিহাসিক চুক্তির ঘোষণা দেন। দীর্ঘ আলোচনার পর এ চুক্তি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি টানাপড়েনের অবসান ঘটাতে যাচ্ছে।

 

 

তবে চুক্তির আওতায় গুরুত্বপূর্ণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সামরিক ঘাঁটি বহাল থাকবে। এই ঘাঁটি বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও বিমানবাহিনীর কৌশলগত অভিযানের অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার ও মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ জুগনাথ জানান, তারা ঘাঁটির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা দীর্ঘমেয়াদে নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, এই চুক্তি শুধু ঐতিহাসিক অবিচার সংশোধনের পথ নয়, বরং 'সম্ভাব্য অবৈধ অভিবাসন পথ' বন্ধ করতেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

 

 

১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে যুক্তরাজ্য চাগোস দ্বীপপুঞ্জ থেকে প্রায় এক হাজার অধিবাসীকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে এবং পরে দিয়েগো গার্সিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে লিজ দেয়। মরিশাসের অভিযোগ, তাদের স্বাধীনতার বিনিময়ে চাগোসের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে বাধ্য করা হয় এবং যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি গোপন চুক্তি হয়।

এই ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, আন্তর্জাতিক আদালত এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা চাগোসকে মরিশাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আফ্রিকান দেশগুলোর একতাবদ্ধ অবস্থান, এবং ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় সমর্থন হারানোর শঙ্কায় যুক্তরাজ্য শেষ পর্যন্ত চুক্তির পথে আসে।

 

চুক্তি অনুযায়ী, চাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য অংশে মরিশাস পুনর্বাসন কার্যক্রম চালাতে পারলেও দিয়েগো গার্সিয়ায় সে অনুমতি পাবে না। যুক্তরাজ্য সেখানে 'প্রাথমিকভাবে' ৯৯ বছরের জন্য সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখবে। যুক্তরাজ্য মরিশাসকে একটি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ও অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

*বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর বিভক্ত মত*

চাগোসবাসীদের অনেকে এখনও যুক্তরাজ্য, মরিশাস ও সিশেলেসে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করছেন। কেউ কেউ তাদের পূর্বপুরুষের ভূমিতে ফিরে যেতে চান, আবার অনেকে যুক্তরাজ্যে নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা চাচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন, দ্বীপপুঞ্জের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে বাইরের কারোর হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।

 

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসের একটি বেদনাদায়ক অধ্যায় অবশেষে শেষের পথে। মরিশাস সরকারের অবিচল কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, আন্তর্জাতিক আইনগত লড়াই ও জনমত গঠনের ফলেই এই চুক্তি বাস্তবায়নের পথে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি “আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
 

আঁখি

×