ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে ভেষজ রত্ন বাসক পাতার গাছ

আরএম সেলিম শাহী, ঝিনাইগাতী, শেরপুর

প্রকাশিত: ১৪:৫৮, ২৪ মে ২০২৫

বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে ভেষজ রত্ন বাসক পাতার গাছ

ছবি : জনকণ্ঠ

বাসক পাতার ঔষধি ব্যবহার আদিকাল থেকেই হয়ে আসছে মানুষের নানা রোগ নিরাময়ে। এ উদ্ভিদটি মহামূল্যবান এক ভেষজ ওষুধ, যা আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় একে ভেষজ রত্ন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে সঠিক তত্ত্বাবধান ও সংরক্ষণের অভাবে শেরপুরের ঝিনাইগাতীর প্রকৃতি থেকে এ ভেষজ রত্ন বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে।

স্থানীয় প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে ও অধিকাংশ বাড়ির আঙিনায় বাসক গাছ দেখা যেত। বর্তমানে এর সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। স্থানীয়দের মতে, আধুনিক এলোপ্যাথি চিকিৎসার ব্যাপক প্রসারের ফলে গাছগাছালির মাধ্যমে প্রদত্ত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। যার ফলে বাসক গাছের মতো আরও বহু ঔষধি গাছ সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্তির পথে হাঁটছে। এতে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত আয়ুর্বেদ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হতে পারে আগামী প্রজন্ম।

বাসক একটি চিরসবুজ গুল্মজাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ। এটি ভারতীয় উপমহাদেশীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Justicia adhatoda। সংস্কৃত নামের ভিত্তিতে এর বাংলা নামকরণ করা হয়েছে ‘বাসক’। এটি সাধারণত আর্দ্র ও সমতল ভূমিতে ভালো জন্মে। তবে ভিন্ন পরিবেশেও এদের বেড়ে উঠতে দেখা যায়।

ইউনানি চিকিৎসকরা বলছেন, বাসক পাতা মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকর। এটি শুকনো কাশি নিরাময়ে বেশ উপকারী। ফুসফুসের বায়ু থলিতে জমে থাকা কফ বের করে আনতেও এটি সাহায্য করে। বাসক ফুসফুসের প্রদাহ, ঠান্ডা-সর্দি, ব্রঙ্কাইটিস ও টনসিলের সমস্যায় বেশ কার্যকর। কাশির সঙ্গে রক্তপাত নিরাময়ে বাসক পাতার রস বা পাতা ফোটানো জল বিশেষ উপকারী। বাসক পাতা লিভারের সমস্যাও উপশম করে।

এছাড়াও বাসক পাতা পানিকে জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। কালো চামড়া উজ্জ্বল করতেও এই গাছের পাতার ব্যবহার রয়েছে। এটি হিস্টামিন নিঃসরণ কমিয়ে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে। ফলে হাঁপানি ও শ্বাসনালির খিঁচুনিজনিত সমস্যায় এটি কার্যকর। বাসক পাতা পেপটিক আলসারের সমস্যায়ও উপকারী ভূমিকা রাখে।

এর পাতায় থাকা অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মানবদেহের জন্য শক্তিশালী অণুজীবনাশক। ফলে এটি বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর। এই পাতার পেস্ট বাতব্যথা ও স্নায়বিক ব্যথা উপশমে সহায়ক। পাতার শুকনো গুঁড়ো ম্যালেরিয়া জ্বর উপশমেও উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও বাসক পাতা বেশ সহায়ক।

ঝিনাইগাতী উপজেলার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডা. নাজমুল হাসান বলেন, “বাসক একটি মূল্যবান ভেষজ উদ্ভিদ। এটি শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় অত্যন্ত কার্যকরী ওষুধ। এ ছাড়াও বাসক পাতার নির্যাস ডায়রিয়া, আমাশয় ও চর্মরোগসহ আরও অনেক রোগ নিরাময় করে থাকে। তবে যেকোনো ভেষজ ওষুধ ইউনানি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই গ্রহণ করা উচিত।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি গাছগাছালি মানুষের কোনো না কোনো উপকারের জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ উদ্ভিদই কোনো না কোনো রোগে ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেই বিবেচনায় প্রতিটি মানুষের প্রাকৃতিক দায়িত্ব হলো গাছগাছালির প্রতি যত্নবান হওয়া। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে এবং মানবদেহের নানা রোগ নিরাময় সহজলভ্য হবে।”

সা/ই

×