
ছবি: জনকন্ঠ
সন্তানের জন্য জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছি। তাদের সুখের জন্য রিক্সা চালিয়ে ঈদে নতুন জামা কাপড় কিনে দিয়েছি। নিজে না খেয়ে সন্তানকে মানুষ করেছি আজ সেই সন্তান বউ-বাচ্চা নিয়ে সুখে শান্তিতে আছে। গত ঈদের মত সামনে কোরবানির ঈদের দিনেও আমার খবর নিবে না এমন কথা বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব বয়সী আক্কাস আলী।
শনিবার (২৪ মে) সকালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে কথা হয় এমন একাধিক বৃদ্ধ বাবা মায়ের সাথে। সেখানে বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা সাজেউর রহমান সাজু নিজের মমতায় পরম যত্নে আগলে রেখেছেন তাদের। তাদের জীবনের শেষ ঠিকানা এখন এই নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রম।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে সকলের সহায়তায় আর নিজ প্রচেষ্টায় বৃদ্ধ বাবা মায়েদের ভালো খাবার আর ঈদের নতুন জামা কাপড়ের জোগানের চেষ্টা করছেন সাজুউর রহমান সাজু। তারা অতীতের স্মৃতিকে ভোলার চেষ্টা করে হাসিমুখেই থাকছেন এখানে।
বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা খালেদা বেগম (৫৩) বলেন, এখানে রয়েছেন চার বছর। স্বামী মারা গেছে ১৫ বছর আগে। একটি মাত্র মেয়ে বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়ে তার সম্পত্তি যা ছিল লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এরপর ঠাঁই হয় নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে।
আরেক বাসিন্দা রহিম উদ্দিন বলেন, আমার ছেলে সন্তান সবাই বাইরের দেশে থাকে। আমি বৃদ্ধ হওয়ায় তারা আমাকে তাদের সাথে নিয়ে যায়নি। আমাকে বাড়িতে ফেলে রেখেছে সেখানে দেখার মত কেউ নাই। আমি অসুস্থ মানুষ একা চলাফেরা করতে পারিনা। এখন তারাও আমার খোঁজখবর নেয়না তাই আমি উপায় না পেয়ে এই বৃদ্ধাশ্রমে এসেছি। আজ ছেলে মেয়েদের অনেক টাকা পয়সা তারা আমার খবর নিল না।
নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা সাজ্জাদুর রহমান সাজু বলেন, এখানে থাকা বৃদ্ধদের দেখাশুনা করি আমি একা। তার মধ্যে অনেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন। চেষ্টা করি তারা যেন ভালো থাকেন। আমি প্রত্যাশা করি, প্রতিটি ছেলে যেন তাদের মা-বাবাকে নিয়ে যান। প্রতিটা বাবা-মা যেন শেষ বয়সে সন্তানের কাছে নিরাপদ একটা আশ্রয় পান। ঈদে তাদের ভালো খাবার আর নতুন জামা কাপড় জোগান দিতে পেরেছি সকলের সহায়তায়। তবে আমি আশা করি সন্তানরা নিজের ভূল বুঝতে পেরে তাদের মা বাবাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে কয়েকজন মা বাবাকে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি।
মুমু