
ছবি: সংগৃহীত।
বিজ্ঞানীরা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে একটি বিশাল ডুবে যাওয়া ভূমি আবিষ্কার করেছেন, যা প্রায় ৫০ লাখ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এটি এতটাই বড় যে অনেক বিজ্ঞানী এখন এটিকে পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশ হিসেবে গণ্য করছেন। এই ডুবে থাকা ভূমির নাম জিল্যান্ডিয়া (Zealandia)।
এর মাত্র ৫ শতাংশই পানির উপরে, যার মধ্যে নিউজিল্যান্ড অন্যতম। গবেষকরা বলছেন, এই মহাদেশটি কোটি কোটি বছর আগে একটি প্রাচীন সুপার মহাদেশ গন্ডওয়ানার (Gondwana) অংশ ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভূপৃষ্ঠের প্লেটের নড়াচড়ায় এটি গন্ডওয়ানা থেকে আলাদা হয়ে যায়।
কিভাবে জিল্যান্ডিয়ার সৃষ্টি
জিএনএস সায়েন্সের বিজ্ঞানী নিক মর্টিমার জানান, প্রায় ১০ কোটি বছর আগে গন্ডওয়ানা মহাদেশটি দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, অ্যান্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়ার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল। পরে এটি ভেঙে যায় এবং তার একটি অংশ থেকে জিল্যান্ডিয়া গঠিত হয়।
প্রাকৃতিক ভূপৃষ্ঠ পরিবর্তনের কারণে এই ভূমি ধীরে ধীরে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে চলে যায়। প্রায় ৮.৫ কোটি বছর আগে এটি অ্যান্টার্কটিকা থেকে এবং পরে অস্ট্রেলিয়া থেকে আলাদা হয়ে যায়।
কেন এটি একটি মহাদেশ?
অনেক বছর ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন এটি শুধু সমুদ্রের নিচের কিছু ছোট ছোট ভূমিখণ্ড। কিন্তু নতুন গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে—এই ভূমি আসলে একটি পূর্ণাঙ্গ মহাদেশের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
গবেষকরা বিশেষ যন্ত্র দিয়ে সমুদ্রের নিচ থেকে পাথরের নমুনা সংগ্রহ করেছেন এবং তাতে মিলেছে প্রাচীন আগ্নেয়শিলা, বালুকাপাথর ও লাভা। পাথরগুলোর বয়স প্রায় ১৪ থেকে ১০ কোটি বছর। এই নমুনা এবং ম্যাগনেটিক ডেটার মাধ্যমে মহাদেশটির সীমানা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা গেছে।
বিজ্ঞানীদের কাছে এর গুরুত্ব
জিল্যান্ডিয়া মহাদেশটি আমাদেরকে বোঝাতে সাহায্য করে—কিভাবে পৃথিবীর মহাদেশগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। এটি গবেষকদের পৃথিবীর অতীত ভূতাত্ত্বিক ঘটনা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে।
এখনো পর্যন্ত পুরো জিল্যান্ডিয়া আবিষ্কৃত হয়নি। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে সিসমিক ইমেজিং ও গভীর সমুদ্র খননের মাধ্যমে এর আরো তথ্য পাওয়া যাবে।
বিশাল এই ডুবে থাকা মহাদেশটি শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয়, বরং এটি প্রমাণ করে—পৃথিবীতে এখনো অনেক অজানা রহস্য লুকিয়ে আছে।
এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে “Tectonics” নামে একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে।
নুসরাত