ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইতিহাস হারানোর অপেক্ষায় নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে জেলখানা-আদালত

বাঁধন মোল্ল্যা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোটার, জামালপুর

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ২৩ মে ২০২৫; আপডেট: ১৬:১২, ২৩ মে ২০২৫

ইতিহাস হারানোর অপেক্ষায় নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে জেলখানা-আদালত

ছবি: জনকন্ঠ

একসময়ের গর্ব, আজ শুধুই নীরবতার প্রতীক। জেলখানার লাল ইটের দেয়াল, মাথার ওপরে কাঁটাতার, আর পাশেই পুরনো আদালত ভবন সব কিছু মিলিয়ে যেন হারিয়ে যাওয়া এক অধ্যায়ের শেষ পাতাগুলো। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্থাপনাগুলো, কিন্তু নেই সেই কোলাহল, নেই কার্যক্রম। ইতিহাস আর উপেক্ষার এক ছবি যেন এদুটো ভবনের অস্তিত্ব।

জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলায় ১৯৮৪-৮৫ সালের দিকে তৎকালীন এরশাদ সরকারের আমলে উপজেলা পদ্ধতির অংশ হিসেবে নির্মিত হয় এই জেলখানা ও আদালত ভবন। পরিকল্পনা ছিল, জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি সহজ করার লক্ষ্যে স্থানীয় পর্যায়ে একটি শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা। সহকারী জজ কোর্টও চালু হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আদালতের কার্যক্রম বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

অন্যদিকে জেলখানাটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও তা কখনোই ব্যবহার শুরু করতে পারেনি। উদ্বোধনের আগেই সরকারের পরিবর্তনের ফলে এটি পরিত্যক্তই থেকে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জেলখানাটি তার মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে, আর আজ পরিণত হয়েছে এক নিঃশব্দ স্মারকে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো জেলখানার কিছু অংশ বর্তমানে ব্যক্তিগত মালিকানার অধীনে চলে গেছে।

পুরো জেলখানা প্রাঙ্গণ এখন শুনশান। লাল ইটের উচ্চ দেয়াল, কাঁটাতারের ঘেরাটোপে আবদ্ধ পরিত্যক্ত ঘরগুলো যেন এক অন্যরকম আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। এই কাঠামো শুধুই পুরনো ভবন নয়, এটি একটি অবহেলিত ইতিহাসের স্তম্ভ। আদালত ভবনটি বর্তমানে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হলেও সেটিও যথাযথ সংরক্ষণ ছাড়াই প্রায় নীরব।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, এই ঐতিহাসিক ভবনদ্বয় সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন, এগুলোকে আশ্রয়ণ প্রকল্প বা কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহারের। তবে আরও অর্থবহ একটি প্রস্তাব হলো এটি স্থানীয় ইতিহাসভিত্তিক জাদুঘরে রূপান্তর করা।

একটি আঞ্চলিক ইতিহাস জাদুঘর এখানে প্রতিষ্ঠা করা গেলে, তাতে বকশীগঞ্জের বিচার ব্যবস্থার প্রারম্ভিক ইতিহাস, জেলখানার আদি নকশা, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক, ও গ্রামীণ জনজীবনের নানান উপাদান সংরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে। এমন একটি জাদুঘর আগামী প্রজন্মকে অতীতের সঙ্গে যুক্ত করবে, গড়ে তুলবে নতুন প্রজন্মের ইতিহাসবোধ।

এই জেলখানা ও আদালত ভবন এখানকার মানুষের অতীতের চিহ্ন। অবহেলায় হারিয়ে যাওয়ার আগে এগুলোকে ইতিহাসের উপযুক্ত জায়গায় স্থাপন করা এখন সময়ের দাবি।

মুমু

×