ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রায়পুরে মেঘনার করাল গ্রাসে ঘরবাড়ি-বিদ্যালয় বিলীন, থামেনি অবৈধ ড্রেজিং

প্রদীপ কুমার রায়, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২৩ মে ২০২৫

রায়পুরে মেঘনার করাল গ্রাসে ঘরবাড়ি-বিদ্যালয় বিলীন, থামেনি অবৈধ ড্রেজিং

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীর উত্তাল ঢেউয়ে তীরবর্তী তিনটি ইউনিয়নের জনপদ হারিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে। জোয়ারে নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। চরইন্দ্রুরিয়া থেকে আলতাফ মাস্টার ইলিশ ঘাট পর্যন্ত আট কিলোমিটারজুড়ে ফসলি জমি, শতাধিক ঘরবাড়ি, রাস্তা, স্কুল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরও দুটি বিদ্যালয়সহ হাজারো স্থাপনা। অথচ এখনো সেখানে নির্মিত হয়নি একটিও স্থায়ী বাঁধ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী ও সংযোগ খালের অন্তত ১২টি স্থানে চলছে অবৈধ ড্রেজিং। রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী বিএনপি নেতা এ কাজে জড়িত বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। প্রশাসনিক পদক্ষেপ থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আটক ও জরিমানার পরও বালু উত্তোলন থেমে থাকছে না। ফলে নদীর তীরবিন্যাস নষ্ট হয়ে ভাঙন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী ও উত্তর চরআবাবিল-এই তিন ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়ে বিস্তীর্ণ জনপদ ইতোমধ্যেই মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সর্বশেষ সাইক্লোন শেল্টার, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কবরস্থান ও মসজিদ হারিয়েছে জনপদ। ঝুঁকিতে রয়েছে ঈদগাহ ও আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হচ্ছে অসংখ্য পরিবার।

চরকাছিয়া, চরইন্দ্রুরিয়া, টুনুরচর, জালিয়ারচরসহ ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামের মানুষরা ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কোথাও যাচ্ছে আত্মীয়ের আশ্রয়ে, কোথাও খোলা আকাশের নিচে। এদের কেউ কেউ বাঁচার আশায় স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, কেউ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরায়েজি জনকণ্ঠকে বলেন, “তিনটি ইউনিয়নের পশ্চিম অংশজুড়ে কোনো স্থায়ী বাঁধ নেই। প্রতিবছর মেঘনার ভাঙনে কৃষকের ঘরবাড়ি, জমি, স্বপ্ন সবকিছু নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ কেউ আমাদের কথা শোনে না।”

উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের সচিব মো. ইউসুফ বলেন, “মেঘনার পাড়ের মানুষের দুঃখ কেবল কাছ থেকে দেখলেই বোঝা যায়। আমরা বহুবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি, কিন্তু সাড়া পাইনি। বাঁধ নির্মাণ হলে এ মানুষগুলো অন্তত নিজের ভূমিতে নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারবে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ড লক্ষ্মীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ-জামান খান বলেন, উত্তর চরবংশীর আলতাফ মাস্টার মাছঘাট এলাকায় ভাঙন রোধে শিগগিরই বাঁধ নির্মাণ শুরু করা হবে। অন্য এলাকা নিয়েও মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বালু দস্যুদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে ততক্ষণে কত জীবন, কত ঘর, কত স্মৃতি নদীর অতলে তলিয়ে যাবে-তা কেউ জানে না। এই বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়-দায়িত্বহীনতা, অবহেলা আর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অব্যাহত নদী দখল-লুটপাটের চিত্র। মেঘনার তীরে স্থায়ী বাঁধ এখন সময়ের দাবিই নয়, জীবন রক্ষার একমাত্র পথ।

মিরাজ খান

×