ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নিষেধাজ্ঞার ১ মাস পার হলেও প্রণোদনার চাল পায়নি ভোলার জেলেরা

মোঃ বেল্লাল নাফিজ, ভোলা

প্রকাশিত: ২১:০২, ২৩ মে ২০২৫

নিষেধাজ্ঞার ১ মাস পার হলেও প্রণোদনার চাল পায়নি ভোলার জেলেরা

সাগরে ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার এক মাসের বেশি সময় পার হলেও এখনো কোনো প্রণোদনার চাল পায়নি ভোলার নিবন্ধিত ৬৫ হাজার জেলে। জেলেদের ভাগ্য জোটেনি সরকারি চাল। এছাড়াও অনেকরেই নাম নেই জেলে নিবন্ধন তালিকায়। ফলে কষ্টে দিন কাটছে জেলেদের। তাই দ্রুত চাল বিতরণ ও জেলে নিবন্ধনের দাবি তাদের। আর দ্রুত সহায়তা পৌছে দেওয়ার আশ্বাস জেলা মৎস কর্মকর্তার।

গত ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে সাগরে সব ধরনের মাছ শিকারের উপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞার আগেই সকল মাছ ধরার বড় নৌকা নিয়ে তীরে ফিরে এসেছেন ভোলার ৭ উপজেলার সাগরগামী জেলেরা। এসময় তারা ঘাটে জাল এবং ফিশিং বোট মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিষেধাজ্ঞায় আয় রোজগার বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন ভোলার জেলে পল্লির পরিবারগুলো। নিষেধাজ্ঞার এক মাসের বেশি সময় পার হলেও এখনো ভাগ্যে জোটেনি কোনো প্রণোদনার চাল। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে চাল আসলেও প্রকৃত জেলেদের না দিয়ে দেওয়া হয় অন্য পেশার জেলেদেরকে।

ভোলার দৌলতখানের জেলে ফারুক মাঝি বলেন, সাগরে অভিযান শুরু থেকেই আমরা সাগরগামী জেলেরা ঠিকমতো বরাদ্দের চাল পাইনা। আমাদের নামের চালের বরাদ্দ হলেও সেটা যারা বিতরন করে তারা সাগর নিবন্ধিত জেলেদের না দিয়ে তাদের পছন্দ মতো জেলেদের নিয়ে ভাগাভাগি করে দেয় ফলে প্রকৃত জেলেরা এর থেকে বঞ্চিতি থাকি।

অন্য আরেক জেলে কাঞ্চন মাঝি বলেন, সরকার ৫৮ দিনের অভিযান দেওয়ার পর থেকে আমরা বসে আছি, জালের কাম করি নৌকার কাম করি। আমরা সরকারের কথা রাখছি কিন্তু সরকার তার কথা রাহেনায়। আজ ১ মাসের বেশি হয়ে গেলো এহনে কোন চাল পাইনাই। তাহলে আমাগো কেমনে চলবো। ঐদিকে এনজিওর ঋণের জন্য লোকজন আইসা বাড়িতে দারায়া তাহে। সেই কিস্তিও তো বন্ধ করে নায়। আমরা পোলাইন চাহন লইয়া বহুত কষ্টে আছি। 

শহিদ মাঝি নামে আরো একজন জেলে, সরকারে অভিযান মেনে সাগরে যাই না, নদীতে যাই মাছ নাই সমিতির কিস্তি, ধারদেনা বাড়তেছে। এমন কইরা কয়দিন চলবো। অনেকে চুরি কইরা সাগরে যায় মাছ ধরতে। এহনো আমাগো যাওন ছাড়া কোন উপায় দেখছি না। তা না হলে পরিবার নিয়া মরতে হইবো না খায়া। 

জেলেদের অভিযোগ মৎস বিভাগের উদাসীনতার কারণে ভোলার প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধন হয়নি অনেকের। তাই দ্রুত তালিকা করে প্রকৃত জেলেদের চাল বিতরন করার দাবি জানান তারা। একই সাথে নিষেধাজ্ঞার সময় ঋণের কিস্তি বন্ধ রাখার দাবি জানান।

আর জেলা মৎস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলছেন, জেলের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপেক্ষিতে এবছর প্রথমবারের মতো পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে মিল রেখে সাগরে ৬৫ দিনের অভিযান কমিয়ে ৫৮ দিন করা হয়েছে। বরাদ্দের ভিজিএফ চাল বরাদ্দ হলেই খুব দ্রুত জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ শুরু করা হবে। 
জেলার ৭ উপজেলায় সাগরে মাছ শিকার করা জেলের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক হলেও সরকারি নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৫ হাজার।

গত ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২১ জুন পর্যন্ত। এসময় জেলেদের দুই ধাপে ৮৬ কেজি করে চাল বিতরণের কথা। প্রথম ধাপে ৫৬ কেজি ও দ্বিতীয় ধাপে ৩০ কেজি।

রাজু

×