
ছবি: সংগৃহীত
একটি ঘড়ির বিজ্ঞাপন দেখছেন বা কোনো দোকানে ডিসপ্লের দিকে তাকাচ্ছেন, দেখলেন সময় ঠিক ১০টা ১০ মিনিট। বিষয়টি আপনার চোখ এড়িয়ে গেলেও বারবার এমন দৃশ্য চোখে পড়লে হয়তো মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে—সব ঘড়ির ছবি বা বিজ্ঞাপনে একই সময় কেনো দেখানো হয়? এটা কি কাকতালীয়, নাকি এর পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত কোনো কারণ? আসলে ১০:১০ সময়টিকে শুধু একটি এলোমেলো সময় ভাবলে ভুল হবে। এর পেছনে রয়েছে নানামাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি—দৃষ্টিনন্দনতা, মানসিক প্রভাব, বিজ্ঞাপনী কৌশল এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্য।
সবচেয়ে আগে যা চোখে পড়ে, তা হলো এই সময় রাখলে ঘড়ির দুইটি কাঁটাই উপরের দিকে একটি খোলা ‘V’ আকৃতি তৈরি করে। এই গঠনটি দেখতে ভারসাম্যপূর্ণ এবং নান্দনিক, যা স্বাভাবিকভাবেই চোখে আরাম দেয়। সৃষ্টিশীল নকশায় ভারসাম্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একদিকে যদি ঘণ্টার কাঁটা ১০টার দিকে থাকে, এবং অন্যদিকে মিনিটের কাটা ২টার দিকে থাকে—তবে পুরো ছবিটিই হয়ে ওঠে চমৎকারভাবে সিমেট্রিক, অর্থাৎ পরিমিত ও সুষম।
এই সময় নির্বাচন করার আরেকটি বড় কারণ হলো, ঘড়ির ডায়ালের উপরের মাঝখানে সাধারণত নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নাম বা লোগো থাকে। ১০:১০ কাঁটার অবস্থান সেই লোগোকে এমনভাবে ঘিরে ফেলে, যেন দু’পাশ থেকে ফ্রেম করে রাখছে। এতে করে ব্র্যান্ডের নামটি আরও দৃশ্যমান হয় এবং তা পণ্যের মূল পরিচয় হিসেবে আরও জোরালোভাবে উপস্থাপিত হয়।
এছাড়া রয়েছে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি। ১০:১০ অবস্থানটি দেখতে অনেকটা মানুষের হাসিমুখের মতো লাগে। এটি সাবলীলভাবে একটি পজিটিভ ভিজ্যুয়াল ইম্প্রেশন তৈরি করে, যা মনের ওপর ভালো প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞাপন মানেই ক্রেতার মন জয় করা, তাই ঘড়ির মুখ যেন একরকম হাসছে—এমন ইঙ্গিত দেওয়াও এখানে লক্ষ্য।
প্রচলিত আছে, কেউ কেউ দাবি করেন, বিশ্ববিখ্যাত কিছু নেতা ও উদ্ভাবকের মৃত্যু সময় স্মরণীয় রাখতে ১০:১০ সময়টি বেছে নেওয়া হয়েছে। যদিও এই দাবি ঐতিহাসিক তথ্য দিয়ে প্রমাণিত নয়, তবুও এটি এই সময়ের চারপাশে কিছু রোমান্টিক রহস্য সৃষ্টি করেছে।
অন্যদিকে, ৮:২০ সময় রাখলে কাঁটাগুলোর অবস্থান হয় ঠিক বিপরীত দিকে। এতে একটি “বিষণ্ণ মুখ” বা “দুঃখের ইঙ্গিত” প্রকাশ পায়। বিজ্ঞাপনে এমন কোনো অনুভব পৌঁছানো মোটেই কাম্য নয়। তাই সেই সময়টি সাধারণত এড়িয়ে চলা হয়।
যদিও ১০:১০ সময় এখন একটি প্রচলিত স্ট্যান্ডার্ড, তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এই সময়কে সামান্য ভিন্নভাবে ব্যবহার করে—যেমন ১০:০৮, ১০:১১, এমনকি ১০:০৯। এই ভিন্নতা তাদের নিজস্ব পরিচয় ধরে রাখার কৌশল। তবে মূল কাঠামো একই থাকে—ঘড়ির ডায়ালকে একটি উজ্জ্বল, সুষম ও মনোগ্রাহী রূপ দেওয়া।
ছোট্ট এই সময় চিহ্নটি আমাদের চোখে প্রতিদিন পড়লেও, এর পেছনের অর্থ, কৌশল এবং শিল্পশৈলীর কথা আমাদের অজানাই থেকে যায়। আর এখানেই লুকিয়ে আছে ১০:১০ সময়ের অনন্যতা—যা সময় দেখানোর চেয়েও বেশি কিছু, একটি দর্শন, একটি দৃষ্টিভঙ্গি।
মুমু