
ছবি: জনকন্ঠ
এক সময়ের সাধারণ মানুষের প্রধান খাবার ছিল ‘কাউন’। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কাউনের চাষ হতো। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ছোট দানার শস্য এক সময় গরিবের পাতে থাকলেও এখন তা স্থান করে নিয়েছে শহুরে ধনীদের বিলাসী খাবারের তালিকায়। আর মাঠে তার উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া দায়।
বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, কাউনের চালে প্রোটিন, আয়রন, ফাইবার ও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স থাকে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আগে এটি ছিল সহজলভ্য ও সস্তা। এখন আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের কারণে মানুষ সহজে কাউন চাষে আগ্রহী হচ্ছে না। বোরো ধান, ভূট্টা, বাদামের মতো অর্থকরী ফসলের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে এই শস্য। তবে আশার কথা হলো, এখনো কিছু কৃষক নিজেদের প্রয়োজনে কাউন চাষ করে যাচ্ছেন।
শিবরামপুর ইউনিয়নের ৮০ বছর বয়সী সাবেক কাউন চাষি আব্দুল মালেক বলেন, আমার ছোটবেলায় আমরা তিনবেলা কাউনের ভাত খেতাম। ধান বা গম এত সহজলভ্য ছিল না। এখনকার মানুষ শখ করে পায়েস খায়, আমরা তো জীবন বাঁচাতে খেতাম। অথচ এখন ফসলটা হারিয়ে যাচ্ছে দেখে খারাপ লাগে।
বীরগঞ্জ উপজেলার ১১নং মরিচা ইউনিয়নের মজিবর রহমান বলেন, আমি অনেক বছর ধরেই কাউন চাষ করে আসছি। এখন তো চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে, কিন্তু আমি এখনো করি, কারণ এই চালের পায়েস বা খিচুরি খেতে যেমন ভালো, দামও ভালো পাওয়া যায়।
বীরগঞ্জ পৌরশহরে তরুন উদ্যেক্তা মো. ফেরদৌস হাসান বলেন, বর্তমানে শহরের অভিজাত হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে কাউনের চাল দিয়ে বানানো পায়েস, ক্ষির, খিচুরি পরিবেশিত হয় ‘হেলদি ফুড’ ট্যাগে। দামও বেশ চড়া। অথচ এই চাল এক সময় পাওয়া যেত গ্রামের বাজারে খুব অল্প মূল্যে। সময় এসেছে এই ঐতিহ্যবাহী শস্যকে পুনরুজ্জীবিত করার। তা না হলে, হয়তো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কাউন শুধুই থাকবে ইতিহাসের পাতায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকজন কৃষক কাউন চাষ করেন। তবে এটি একটি পুষ্টিকর ও পরিবেশবান্ধব ফসল। বেলে দোআঁশ মাটিতে পানি জমে না এমন জায়গায় কাউনের ফলন ভালো হয়। ভবিষ্যতে কাউন চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিতে প্রশিক্ষণ, বীজ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
মুমু