বিজ্ঞানীরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সূর্য প্রসারিত হয়ে একদিন পৃথিবীকে গ্রাস করবে। তবে তারও অনেক আগেই পৃথিবীর বুক থেকে প্রাণের অস্তিত্ব মুছে যেতে পারে। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট 'নিউ অলটাস'-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, আর মাত্র ১০০ কোটি বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগ অক্সিজেন ফুরিয়ে যাবে!
বর্তমানে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের প্রায় ২১ শতাংশ অক্সিজেন দিয়ে গঠিত, যা পৃথিবীতে প্রাণের টিকে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ। কিন্তু এই অক্সিজেনের মাত্রা কতদিন থাকবে, তা জানতে জর্জিয়া টেক এবং তোহো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি গবেষণা চালিয়েছিলেন। তারা পৃথিবীর জলবায়ু, জৈবিক ও ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া, সূর্যের ঔজ্জ্বল্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন।
অক্সিজেন হ্রাসের কারণ:
গবেষকদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের আয়ু সম্ভবত ১০০ কোটি বছরের কিছু বেশি। তাদের ধারণা, ১০০ কোটি বছর পর থেকেই অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করবে। এমনকি, প্রায় ১১০ কোটি বছর পর বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের মাত্রা মাত্র এক শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হবে সূর্য। তাদের মতে, সূর্যের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর তাপ ও উজ্জ্বলতা আরও বাড়বে, যা পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়লে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড অতিরিক্ত গরমে ভেঙে যাবে। এই দুটি কারণে উদ্ভিদ বাঁচতে পারবে না।
উদ্ভিদই পৃথিবীর অক্সিজেনের প্রধান উৎস। কিন্তু উদ্ভিদকুল নষ্ট হয়ে গেলে সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে নতুন অক্সিজেন তৈরি হবে না, যার ফলে বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাবে।
মানুষের ভবিষ্যৎ:
তবে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল প্রথম থেকেই অক্সিজেনে সমৃদ্ধ ছিল না। প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের অভাব ছিল। ২৪০ কোটি বছর আগে থেকে অক্সিজেনের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার ফলে বহুকোষী প্রাণের উদ্ভব হয়েছিল।
তবে এখনই পৃথিবীর অক্সিজেনের মাত্রা কমছে না। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মানুষ নিঃসন্দেহে আরও ১০০ কোটি বছর পৃথিবীতে বাঁচবে। তাদের মতে, এই সময়ের মধ্যেই মানবজাতিকে মহাবিশ্বে বসবাসের উপযোগী অন্য কোনো স্থান খুঁজে নিতে হবে। অন্যথায় ধীরে ধীরে মানবজাতির অস্তিত্ব চিরতরে মুছে যেতে পারে।
সাব্বির
