
দৈনিক জনকণ্ঠ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে প্রচণ্ড গরমে কদর বেড়েছে তালের শাঁসের, একটু স্বস্তি পেতে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বিক্রি হওয়া এই ফলের স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে। এর ভেতরের অংশ জলীয় হওয়ায় এটা খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়।
উপজেলার ভানুগাছ বাজার, আদমপুর, রানীবাজার, শমশেরনগর, মুন্সিবাজার বাজারসহ বিভিন্ন বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে কাচি তাল। স্থানীয় বিক্রেতারা জানান, এগুলো সংগ্রহের পাশাপাশি দেশের নানা জায়গা থেকে আমদানিও করে থাকেন।
মৌসুমি এ ফল এখন গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছে। অনেকেই বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন রসালো শাঁস।দাম কিছুটা বেশি হলেও তাজা ও ফরমালিনমুক্ত তালের শাঁস শরীরের জন্য উপকারী। গরমের দিনে এতে থাকা জলীয় অংশ পানিশূন্যতা দূর করে, দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং মুখের রুচিও বাড়ায়।
তালের শাঁসে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি ও সি-সহ নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, হাটবাজার ও ব্যস্ত সড়কের পাশে তালের শাঁস বিক্রি করছেন অনেকে। ক্রেতারাও আগ্রহ নিয়ে খাচ্ছেন এ ফল।
সুস্বাদু এ ফলটি ধারালো দা দিয়ে কচি তাল কেটে তালের শাঁস বের করছেন আর ক্রেতারাও অনেক আগ্রহ নিয়ে এগুলো কিনছেন। মৌসুমি অনেক ফলের সাথে এ ফলের চাহিদা বেড়েছে। যার ফলে বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষকে খেতে দেখা যায় এ সুস্বাদু তালের শাঁস।
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার তালের শাঁস বিক্রেতা শাহজাহান মিয়া বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাল সংগ্রহ করি। প্রতিটি তাল ১০ থেকে ১৫ টাকায় পাইকারি কিনে এনে বাজারে খুচরা ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করি।
তিনি আরও বলেন, এইবছর আমি জেলার ১৪টি গ্রাম থেকে তাল সংগ্রহ করেছি। জেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে তাল বিক্রি করছি। গরমের সঙ্গে তালের শাঁসের চাহিদা বেড়েছে। প্রতি বছর বৈশাখের মাঝামাঝি থেকে জ্যৈষ্ঠের শেষ পর্যন্ত তালের শাঁস বিক্রি করি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩০০ থেকে ৪০০টি কচি তাল বিক্রি হয়।
বিক্রেতা রহিম মিয়া বলেন,একটি তালে দুটি বা তিনটি শাঁস থাকে। কেউ একটু তরল, কেউ একটু শক্ত শাঁস পছন্দ করেন। আমি প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ কাঁদি (ছড়া) তাল বিক্রি করি। গাছ থেকে কাঁদি কেটে এনে বাজারে বিক্রি করি। কষ্ট হলেও লাভ ভালো হয়।তালের শাঁস বিক্রি করে আমরাও লাভবান হচ্ছি।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী মঈনুল হাসান সুমন বলেন, ‘তালের শাঁস খেতে খুবই সুস্বাদু । গরম থেকে এসে খেতে ভালোই লাগে। এবারের প্রচণ্ড দাবদাহে তালের শাঁসের চাহিদা বেড়েছে।পারভেজ আহমদ নামে আরও একজন ক্রেতা বলেন,এই গরমে স্বস্তি দিতে তালের শাঁস সবার পছন্দের ফল।
ক্রেতা আশরাফ সিদ্দিকি বলেন,গরমে বরাবরই আমার অত্যন্ত পছন্দের ফল তালের শাঁস,এজন্য নিজে খেয়ে পরিবারের জন্যও নিয়ে যাচ্ছি।
তীব্র গরমে শরীর ও পেট ঠান্ডা রাখে তালের শাঁস। প্রতি ১০০ গ্রাম তালের শাঁসে শূন্য দশমিক ৮ গ্রাম খাদ্যোপযোগী খনিজ পদার্থ, ২০ দশমিক ৭ গ্রাম শর্করা, শূন্য দশমিক ৮ গ্রাম আমিষ, শূন্য দশমিক ৫ গ্রাম আঁশ থাকে। এ ছাড়া শূন্য দশমিক ৫ গ্রাম খাদ্য আঁশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক। অবাক করার মতো খাদ্যশক্তি আছে। প্রায় ৮৭ কিলোক্যালোরি ও ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকায় এটি হাড় গঠনেও ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর তালের শাঁস নানা রোগের প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম ভূইয়া বলেন, গরমে তালের শাঁস খাওয়া ভাল যদি স্বাস্থ্য সম্মত হয়। তবে যাদের হজমে সমস্যা করে, তারা না খাওয়াই উত্তম।
হ্যাপী