ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পদত্যাগ নয়, সর্বদলীয় বৈঠক হবে

অভিমান কাটিয়ে প্রত্যয়ী ড. ইউনূস

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ২৩ মে ২০২৫

অভিমান কাটিয়ে প্রত্যয়ী ড. ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

মান-অভিমান কাটিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন দৃঢ প্রত্যয়ী। দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ চিন্তা করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। রাষ্ট্রের হাল ধরতে চান আরও শক্ত হাতে। প্রয়োজনীয় সংস্কার, ফ্যাসিবাদীদের বিচার এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সমান গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে চান লক্ষ্যপানে। এ জন্যে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে সেখানে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন তিনি। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে পরিষ্কার করবেন নিজের অবস্থান। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ফ্যাসিবাদবিরোধী অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক পক্ষগুলোর বিভাজন প্রধান উপদেষ্টাকে বেশি অভিমানি করে তুলেছে। যারা তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন তারাই যখন সরকারের বিপক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। সেটি মেনে নিতে পারছেন না প্রফেসর ইউনূস। তার ধারণা, চট্টগ্রাম বন্দর, সহায়তা করিডর, জাতিসংঘ রিপোর্ট, নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রভৃতি ইস্যু নিয়ে নানা কথা বলা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে বিদেশে খারাপ  মেসেজ যাচ্ছে বলেই প্রধান উপদেষ্টা সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন বলে সূত্র উল্লেখ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই বর্তমান সরকারকে অসহযোগিতা করে আসছে। আমলারা সরকারে নির্দেশনা পালনে গড়িমসি করছে। পুলিশ বাহিনী সক্রিয় হচ্ছে না। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়েও আরাধীদের দমনে সেনাবাহিনী দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করছে না। এতসব সত্ত্বেও সরকার অনেকটা ধৈর্য্য ধরে কৌশল করে এগুচ্ছিল। এরই মধ্যে ছাত্রদের কিছু কার্যকলাপ প্রধান উপদেষ্টাকে বিব্রত করে। ফ্যাসিবাদীদের দমনের নামে বিচারের দায়িত্ব হাতে তুলে নেওয়া এবং বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে জড়ানোসহ বেশকিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। এরই মধ্যে সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টাতে মারাত্মকভাবে ব্যাথিত করে।
সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা গত কয়েক দিনে দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে একাধিকবার একান্তে ডেকেছেন। তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে অযাচিত ফেসবুক পোস্ট না দিতে বলেছেন। তিনি চলে গেলে বিপ্লবী ছাত্রনেতাদের অবস্থা কতটা ভয়াবহ হতে পারে সে বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধান উপদেষ্টা। ফলস্বরূপ মাহফুজ আলম নতুন স্ট্যাটাস দিয়ে সংক্ষুব্ধ পক্ষগুলোর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো বিষয়ে শক্ত অবস্থান থেকে কিছুটা নমনীয় হয়েছেন। ক্ষুব্ধ ইউনূসকে স্বাভাবিক করতে তার বাসভবনে দৌড়ে গেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এমনও শোনা যাচ্ছে যে, ক্ষুব্ধ বিএনপি-জামায়াতের রাগ ভাঙাতে এনসিপি নেতারা প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে প্রধান উপদেষ্টাকে কথা দিয়েছেন।
এদিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শুক্রবার পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আবারও পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তার একদিনও এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের পক্ষ থেকে নেই’। চাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রত্যাশার একটা চাপ তো আছেই। আমরা যথাযথভাবে পারফর্ম করতে পারছি কি না। আমাদের বিবেচনায় এটাই একমাত্র চাপ। এর বাইরে আর কোনো চাপ নেই’। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আমাদের দায়িত্ব থাকাটা প্রাসঙ্গিক। আমরা যদি না পারি, আমাদের যার যার নিজস্ব কাজ আছে, সেখানে ফিরে যাব। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্বে থাকাটা আর প্রাসঙ্গিক থাক থাকল কি না?’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ডেমোক্র্যাটিক ট্রানজেকশনের জন্য ড. ইউনূস স্যারের দরকার আছে।’ ‘আমাদের দেখাতে হবে যে, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে জনতার সম্মতিতে ক্ষমতায় এসে প্রফেসর সাফল্য দেখিয়েছেন। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্মান আছে, এটা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’ অবশ্য এ বক্তব্য সরকারের নয় তার নিজের বলে দাবি করেছেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপি বা সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো বিরোধে জড়াতে চান না প্রফেসর ইউনূস। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও কোনো বিরোধ চান না তিনি। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যেতে চান প্রধান উপদেষ্টা। লক্ষ্য বাস্তবায়নে আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হবে। বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও তার দোসর ছাড়া অপরাপর সব দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেখানে একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিতে পারেন ড. ইউনূস। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে সব দল থেকে প্রতিনিধি নিয়ে অথবা সব দলের মনোনীত প্রতিনিধি যুক্ত করে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করা হতে পারে বলে সূত্র জানায়।

×