
ছবিঃ সংগৃহীত
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে সম্প্রতি একটি অদ্ভুত, মজার আর মন ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনা ঘটেছে—এক চঞ্চল বিড়ালকে নিয়ে, যে পুলিশের থানায় একের পর এক অফিসারকে কামড়ে আর আঁচড়ে বসিয়েছিল! পরে তার একটি "মাগশট" (গ্রেপ্তারের ছবি) তুলে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
ঘটনাটি শুরু হয় ৯ মে, যখন এক স্থানীয় নাগরিক একটি গোলাপি হারনেস পরা আমেরিকান শর্টহেয়ার বিড়ালকে ব্যাংককের একটি পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসেন। অফিসার দা পরিন্দা পাকিসুক বিড়ালটিকে সাদরে গ্রহণ করেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায়, এই সুন্দর চেহারার পোষা প্রাণীটি যে ভীষণ খামখেয়ালি!
সে একে একে থানার অফিসারদের আঁচড়াতে আর কামড়াতে শুরু করে। মজার ছলে অফিসার পাকিসুক সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, "এই বিড়ালের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এখন তাকে গ্রেপ্তার করে রাখা হবে। কেউ যদি তাকে চেনে, তাহলে এসে জামিনে ছাড়িয়ে নিন!"
এরপর সেই সন্ধ্যায় অফিসার নিজেই বিড়ালটিকে গাড়িতে করে বাড়িতে নিয়ে যান। পথে বিড়ালটির একরাশ বিরক্ত মুখভঙ্গির ছবি তুলে তিনি পোস্ট করেন, যা দেখেই নেটদুনিয়া হাসিতে ফেটে পড়ে।
একজন মন্তব্য করেন, “এই বিড়াল তো রীতিমতো রাগ করে বসে আছে! উদ্ধারের জন্য কোনও কৃতজ্ঞতা নেই।”
আরেকজন লেখেন, “এই অফিসার না থাকলে তো এখন তুমি রাস্তার বিড়াল হয়ে থাকতে!”
অফিসার পাকিসুক জানান, বিড়ালটির জন্য তিনি নিজের বাসায় প্রস্তুত রেখেছিলেন খাবার, খেলনা ও আরামদায়ক বিছানা। হাসতে হাসতে বলেন, “সে তো রাজকীয় জীবন কাটাচ্ছে! আর আমরা পুলিশরাই যেন আসল শিকার!”
অনেকেই এই সুন্দর বিড়ালটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু অফিসার পরিষ্কার জানান, “আমাদের প্রথম কাজ হলো বিড়ালটিকে তার প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। যদি সত্যিই বিড়াল ভালোবাসেন, তাহলে আশ্রয়কেন্দ্র বা রাস্তা থেকে একটি প্রাণী দত্তক নিন।” তিনি আরও জানান, তার নিজের বাড়িতে ২০টি বিড়াল ও ৬টি কুকুর রয়েছে—সবই উদ্ধার করা।
পরদিন এক নারী এসে জানান, বিড়ালটির নাম "নুব তাং"—থাই ভাষায় যার অর্থ “টাকা গোনা”। বিড়ালটিকে ফেরত নিতে তিনি থানায় আসেন এবং তাকে একটি সাদা লেসের কলার পরিয়ে নিয়ে যান।
থানায় পুনর্মিলনের সময়, অফিসার পাকিসুক একটি মজার "প্রতিবেদন" লেখেন বিড়ালটির ভাষায়: “আমি শুধু খুব ক্ষুধার্ত ছিলাম। কাউকে কামড় দিতে চাইনি।”
এই "জবানবন্দি"র নিচে বিড়ালটি পায়ের ছাপ দিয়ে “সই” করে দেয়।
অফিসার হেসে বলেন, “তাকে মৌখিক সতর্কবার্তা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এমন ঘটনা আর যেন না ঘটে—না হলে অন্য বিড়ালরা ভাববে কামড় দেওয়া খুবই সাধারণ বিষয়!”
এই ঘটনার পর, অসংখ্য মানুষ হাসিমুখে মন্তব্য করেন:
“এটা জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অপরাধ!”
“এই অফিসার যেমন দয়ালু, তেমনি দারুণ রসবোধসম্পন্ন।”
“আমি আমার বিড়ালদের এই খবরটা দেখিয়েছি। আশা করি তারা এবার থেকে আমার জুতো আর কম্পিউটার তার চিবাবে না!”
এই গল্পটা শুধু একটা বিড়ালকে নিয়ে নয়, বরং আমাদের চারপাশের ছোট্ট, হাস্যকর কিন্তু মানবিক মুহূর্তগুলো নিয়েও। যে পুলিশ অফিসার শুধু দায়িত্ব পালন করেননি, বরং প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টান্তও রেখেছেন।
মারিয়া