ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সংস্কারের অভাবে বিলীনের পথে উল্লাসকর দত্তের বাড়ি

মোঃ আতিকুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ২৪ মে ২০২৫

সংস্কারের অভাবে বিলীনের পথে উল্লাসকর দত্তের বাড়ি

ছবি: জনকন্ঠ

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক বিপ্লবী বীর উল্লাসকর দত্তের বাড়িটি বিলীন হওয়ার পথে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের এই কৃতিসন্তানের একমাত্র স্মৃতি চিহ্ন  জরাজীর্ণ বাড়িটি সংস্কারে নানা সময়ে আলোচনা উঠলেও এখনও তা আলোর মুখ দেখেনি।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা রাখা বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত ১৮৮৫ সালের ১৬ এপ্রিল কালিকচ্ছের দত্তপাড়ার এই বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুণী এই মানুষটির ২০০ বছর পুরনো বাড়িটি রক্ষার্থে একাধিক ব্যক্তি সংগঠন দাবি জানানোর প্রেক্ষিতে একাধিকবার সরাইল উপজেলা জেলা প্রশাসনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা'রা জায়গাটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে একাধিক চিঠি প্রেরণ করেন।

তার ফলস্বরূপ গত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিপ্লবী বীর উল্লাসকর দত্তের বাড়িটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার আওতায় এনে গেজেট প্রকাশ করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। গেজেট সূত্রে জানা গেছে, প্রত্নসম্পদ আইনের ১০ ধারা () উপধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার উল্লাসকর দত্তের বাড়িটিকে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ বলে ঘোষণা করেছে। আরএস খতিয়ান ২৩১৩এর ৮৫২৯ দাগে কালীকচ্ছ মৌজার বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের বাড়িটি মোট ৩১ শতকের। এর মধ্যে ১৫ শতক পরিমাণ জায়গার মূল বাড়িটিকে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে সিএস জরিপে বাড়িটির মালিক উল্লাসকরের বাবা দ্বিজ দাস দত্ত বলে উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তীতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জানিয়েছিলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। চিঠির আলোকে জায়গাটি কতটুকু অধিগ্রহণ করা হবে এর তফসিলও পাঠিয়েছি। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তারা অর্থ বরাদ্দ করবে বলে আশা করছি।

তবে আজও আলোর মুখ দেখেনি সকল প্রচেষ্টা। অযত্নে অবহেলায় মহান এই মানুষটির শেষ স্মৃতি চিহ্ন আজ অস্তিত্ব হারানোর পথে।

উল্লেখ্য, বিপ্লবী বীর উল্লাসকর দত্ত ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন মহানায়ক হিসেবে পরিচিত। আন্দোলন চলাকালে একাধিকবার গ্রেফতার নির্যাতনের শিকার হলেও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি। নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে দীর্ঘ একটা সময় কারাবরণ করতে হয়েছে তাকে।

মহান এই মানুষটি ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের পর গ্রামের বাড়ি কালিকচ্ছ ফেরত আসেন এবং ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ৬৩ বছর বয়েসে বিশিষ্ট নেতা বিপিনচন্দ্র পালের বিধবা মেয়ে লীলা পালকে বিবাহ করেন। সেখানে ১০ বছর কাটানোর পর তিনি ১৯৫৭ সালে কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন। উল্লাসকর তার শেষ জীবন শিলচরে কাটান এবং সেখানেই ১৯৬৫ সালের ১৭ই মে মৃত্যুবরণ করেন।

মুমু

×