
ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়া ও ইউক্রেন শুক্রবার যুদ্ধের সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময় সম্পন্ন করেছে। উভয় পক্ষ ৩৯০ জন করে সেনা ও বেসামরিক নাগরিককে ফিরিয়ে দিয়েছে। দুই দেশের সরকার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে এবং জানিয়েছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে আরও বন্দি বিনিময় হবে, যার মাধ্যমে এক হাজার জন করে বন্দিকে ফেরত পাঠানো হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্দিদের ফেরার ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন, “আমরা আমাদের মানুষদের ঘরে ফিরিয়ে আনছি।” ছবি গুলোর অধিকাংশেই দেখা গেছে রুগ্ন ও ক্ষীণ দেহের বন্দিদের, মাথা মুড়ানো এবং কাঁধে ইউক্রেনের পতাকা জড়ানো।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের ২৭০ জন সেনা ও ১২০ জন বেসামরিক নাগরিককে বেলারুশে হস্তান্তর করা হয়েছে, যেখান থেকে তাদের রাশিয়ায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীও একই সংখ্যা নিশ্চিত করেছে তাদের পক্ষ থেকেও।
গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনায় এই বন্দি বিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়, যা যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম সরাসরি আলোচনা। ইউক্রেনের চেরনিহিভ অঞ্চলে শত শত পরিবার হাসপাতালে পৌঁছায় তাদের প্রিয়জনদের ফিরে পেতে। অনেকেই ইউক্রেনের নীল-সোনালি পতাকা জড়িয়ে ছিলেন, হাতে ছিল প্রিয়জনদের ছবি।
বন্দিরা যখন বাস থেকে নামছিল বা হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছিল, তখন অনেকেই বিস্মিত ছিলেন এত মানুষের উপস্থিতি দেখে। অনেকে তিন বছর পর্যন্ত বন্দিত্বে ছিলেন—তাদের কাছে যুদ্ধের খবর, পরিবারের অবস্থা বা বাড়িঘরের খবর জানা ছিল না।
একজন মায়ের ফোনে এক বন্দি বলছিলেন, “মা, আমাকে বিনিময় করা হয়েছে। আমি বাড়িতে, আমি বেঁচে আছি, আমার সব ভালো, মা।”
এই বন্দি বিনিময় দুই দেশের মাঝে বিরল যোগাযোগের একটি পথ হিসেবে রয়ে গেছে। ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপসহ বহু কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। তবে গত তিন বছরে ৬০টির বেশি বন্দি বিনিময় হয়েছে।
বন্দিদের প্রতি আচরণ নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, রাশিয়ার হাতে বন্দিরা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ইউক্রেনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে, তবে জাতিসংঘ বলছে ইউক্রেনের মধ্যে এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন এবং তুলনামূলকভাবে কম। ইউক্রেন জাতিসংঘ ও রেড ক্রসকে বন্দিশিবিরে প্রবেশের অনুমতি দেয়, যা রাশিয়া ও দখলকৃত অঞ্চলে দেওয়া হয় না।
ফেরত আসা বন্দিরা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান। উদাহরণস্বরূপ, ডেনিস নামের এক ব্যক্তি মারিউপোলে বন্দি হওয়ার আগে একটি বিস্ফোরণে তার হাত হারান। তিনি জানান, ৮০০ বন্দিকে মাত্র ১৫০টি খাটওয়ালা কক্ষে রাখা হয়, এবং ৩৪ দিনের বন্দিজীবনে তাকে অন্তত ১৫ বার মারধর করা হয়।
এক বেসামরিক বন্দি ভিতালি সিতনিকভ জানান, বন্দিশিবিরে ‘পিট’ নামে একটি শাস্তিকক্ষ ছিল, যেখান থেকে প্রতিদিন যুদ্ধবন্দিদের মারধরের শব্দ শোনা যেত।
সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস
এএইচএ