
ছবি: সংগৃহীত
চরম মাত্রায় শরীর গঠন, কঠিন ব্যায়াম, কড়া ডায়েট এবং পারফরম্যান্স বাড়ানো ড্রাগের অপব্যবহার—এই তিনটি জিনিস একত্রে বডিবিল্ডারদের গঠিত করে। তবে এই সুঠাম দেহের বিনিময়ে যা খরচ হয়, তা হলো মানুষের জীবন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাংসপেশি গড়া পেশাদার বডিবিল্ডারদের হঠাৎ হৃদরোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা সাধারণ মানুষের তুলনায় দ্বিগুণ।
গবেষণায় দেখা গেছে, বডিবিল্ডারদের মধ্যে ৪০ শতাংশ মৃত্যু হঠাৎ ও হৃদয়ঘটিত। ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে মঙ্গলবার (২০ মে) প্রকাশিত এই গবেষণায় ২০০৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অন্তত একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ২০,২৮৬ জন পুরুষ বডিবিল্ডারের মৃত্যু সংক্রান্ত রিপোর্ট বিশ্লেষণ করা হয়। একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে চিকিৎসকেরা মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করেন।
এই বিশাল সংখ্যক বডিবিল্ডারের মধ্যে ১২১ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। এদের মৃত্যুর গড় বয়স ছিল মাত্র ৪৫ বছর। গবেষণায় দেখা গেছে, পেশাদার বডিবিল্ডারদের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি অপেশাদারদের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি।
গবেষণায় আরও বলা হয়, মৃত বডিবিল্ডারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন উত্তর আমেরিকায় (৪০.৫ শতাংশ, বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের), এরপর ইউরোপ (৩৮.৮ শতাংশ), এশিয়া (৭.৪ শতাংশ), আফ্রিকা (৬.৬ শতাংশ), দক্ষিণ আমেরিকা (৫ শতাংশ) এবং ওসেনিয়া (১.৭ শতাংশ)।
কিছু বডিবিল্ডারের ময়নাতদন্তে হৃদপিণ্ডের পেশি পুরু হয়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কারো কারো দেহে করোনারি আর্টারি ডিজিজও ছিল। অনেকে অ্যানাবলিক স্টেরয়েড জাতীয় ড্রাগের অপব্যবহার করেছেন, যা দীর্ঘ মেয়াদে হৃদপিণ্ডে গুরুতর চাপ সৃষ্টি করে গঠনগত পরিবর্তন ঘটায়।
গবেষণার সহলেখক এবং ইউনিভার্সিটি অব পাডোভার ক্রীড়া চিকিৎসাবিদ মার্কো ভেচ্চিয়াতো বলেন, “বডিবিল্ডিং এমন এক কার্যক্রম যাতে শরীরের উপর নানা ধরনের চরম চাপ পড়ে—যেমন অতিরিক্ত শক্তিবর্ধক প্রশিক্ষণ, হঠাৎ ওজন কমানো, কঠোর খাদ্যনিয়ন্ত্রণ, পানিশূন্যতা, এবং পারফরম্যান্স-বর্ধক বিভিন্ন পদার্থের ব্যাপক ব্যবহার।”
তিনি আরও বলেন, “শরীরকে সুন্দর ও দৃঢ় করার চেষ্টাটি প্রশংসনীয়, তবে যেকোনো মূল্যে চরম দেহ রূপান্তরের চেষ্টা হৃদয়ের জন্য ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে।”
গবেষণায় মানসিক দিকটিও গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, সমাজের পেশি-ভিত্তিক সৌন্দর্যের মানদণ্ড অর্জনের চাপ থেকে অনেক সময় খেলোয়াড়রা মানসিক চাপে ভোগেন, শরীর নিয়ে অসন্তুষ্ট হন এবং শরীর-সম্পর্কিত বিকৃত মানসিকতা (বডি ডিসমর্ফিক ডিজঅর্ডার) সৃষ্টি বা আরও খারাপ অবস্থায় পৌঁছাতে পারেন।
সূত্র: এনডিটিভি
এএইচএ