ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিপদ ডেকে আনছে ‘সুন্দর’ মুখ! বিড়াল-কুকুরের চেহারা বদলাচ্ছে মানুষের জন্য

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ২৪ মে ২০২৫; আপডেট: ১৩:১২, ২৪ মে ২০২৫

বিপদ ডেকে আনছে ‘সুন্দর’ মুখ! বিড়াল-কুকুরের চেহারা বদলাচ্ছে মানুষের জন্য

আপনি যদি কখনও মনে করে থাকেন যে কিছু বিড়াল আর কুকুর আজকাল দেখতে প্রায় এক, তাহলে সেটা কিন্তু আপনার চোখের ভুল নয়। সত্যিই এখন অনেক বিড়াল-কুকুরের মুখাবয়ব এতটাই মিল যে একঝলকে আলাদা করা মুশকিল! বিজ্ঞানীরাও বলছেন, এই অদ্ভুত মিলের পেছনে দায় আমাদেরই মানে, মানুষের পছন্দ-অপছন্দই বদলে দিচ্ছে প্রাণীদের প্রকৃত গঠন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি ও ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির দুই খ্যাতিমান গবেষক, অ্যাবি ড্রেক ও জোনাথন লোসোস, একটি বিস্তৃত গবেষণা চালিয়েছেন। সেখানে তারা প্রায় ২,৮০০টি গৃহপালিত ও বন্য বিড়াল-কুকুরের খুলি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, গৃহপালিত প্রাণীগুলোর মাথার আকৃতিতে রয়েছে আশ্চর্যজনক বৈচিত্র্য। তবে সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হলো কিছু গৃহপালিত কুকুর ও বিড়ালের খুলির গঠন এতটাই একরকম, যা তাদের বন্য পূর্বপুরুষদের সঙ্গেও মেলে না!

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পগ, পিকিনিজ কুকুর ও পার্সিয়ান বিড়ালের মুখাবয়ব প্রায় হুবহু মিল রয়েছে। বড় বড় চোখ, চ্যাপা নাক, গোল মুখ সবই যেন একই ছাঁচে গড়া!

‘কিউট’ মুখের ফাঁদে আমরা সবাই!
মানুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে গঠিত যে আমরা শিশুর মতো মুখাবয়ব দেখলেই নরম হয়ে যাই। বড় চোখ, ছোট নাক, গোলগাল মুখ—এসব দেখলেই আমাদের মনে হয়, "আহা, কত আদুরে!" এই মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতাই আজ বিড়াল ও কুকুরের চেহারায় নিয়ে এসেছে পরিবর্তন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ এই ধরনের মুখ দেখে যত্ন নিতে ইচ্ছুক হয়, ফলে প্রজননকারীরাও চেষ্টা করেন প্রাণীদের এমনভাবেই গড়ে তুলতে। যাকে বলে "বেবি ফেস" ইফেক্ট। এ কারণেই এসব প্রাণীর প্রতি আবেগও বেশি।

ব্রিড স্ট্যান্ডার্ডেও রয়েছে এক চেহারার চাপ
এই চেহারার মিল শুধু মানুষের পছন্দেই সীমাবদ্ধ নয়, এটা এখন নিয়মেও পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন কুকুর ও বিড়ালের জন্য নির্ধারিত ব্রিড স্ট্যান্ডার্ডেও বলা আছে, নাক যেন চোখের মাঝে থাকে, মুখ যেন সমতল হয়। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চেহারার গঠন হয়ে উঠছে আরও একরকম।

বিজ্ঞানীরা এটিকে বলছেন ‘কনভারজেন্ট ইভল্যুশন’—মানে, আলাদা প্রজাতির প্রাণীরা যদি একই ধরনের বৈশিষ্ট্য অর্জন করে, তবে সেটাই। তবে এখানে পরিবেশগত চাপ নয়, কাজ করছে মানবিক সৌন্দর্যবোধ!

সৌন্দর্যের জন্য প্রাণীদের ভোগান্তি
যদিও এ ধরনের মুখ অনেকের কাছে কিউট মনে হয়, কিন্তু এর পেছনে রয়েছে অনেক স্বাস্থ্যঝুঁকি। গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের চ্যাপা মুখের কুকুর ও বিড়ালরা প্রায়ই শ্বাসকষ্ট, চোখের সমস্যা ও দাঁতের জটিলতায় ভোগে। এমনকি অনেক সময় বিমানে উঠতেও নিষেধাজ্ঞা থাকে, কারণ উচ্চচাপে তাদের নাক দিয়ে রক্ত পড়ার ঝুঁকি থাকে।

এই সমস্যাগুলো তাদের বন্য পূর্বপুরুষদের ছিল না। মানে, শুধু দেখতে মিষ্টি লাগার জন্য প্রাণীদের স্বাভাবিক গঠনে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, যার খেসারত দিচ্ছে প্রাণীরাই।


গবেষণাটি প্রমাণ করে, মানুষ কীভাবে নিজেদের রুচির কারণে হাজার হাজার বছরের বিবর্তন প্রক্রাতেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিড়াল ও কুকুর দুই ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী, যাদের বিবর্তনগত দূরত্ব প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর, আজ তারা দেখতে হয়ে উঠছে প্রায় একই রকম! শুধু মাত্র ‘কিউট’ দেখানোর জন্য।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা শুধু অবাক করার মতোই নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য ভাবনার বিষয়ও বটে।

সূত্র: https://indiandefencereview.com/cats-and-dogs-are-increasingly-starting-to-look-alike-and-were-the-ones-to-blame/

মিমিয়া

×