
করোনার থাবা কি আবার ফিরে আসছে? ভারতে হালকা হলেও ঊর্ধ্বমুখী কোভিড সংক্রমণ দেখে নতুন করে সতর্ক অবস্থানে এসেছে বিভিন্ন রাজ্য। দিল্লি সরকার ইতোমধ্যেই হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে অক্সিজেন, ওষুধ, বেড এবং ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত মজুদের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী পঙ্কজ কুমার সিং জানান, “গতকাল পর্যন্ত দিল্লিতে ২৩টি করোনা সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়েছে। আমরা যাচাই করছি, এই রোগীরা দিল্লির বাসিন্দা কিনা বা বাইরে থেকে এসেছেন। তবে দিল্লি সরকার সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং জনসাধারণকে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।”
মুম্বাইয়ে চোখ রাঙাচ্ছে নতুন ঢেউ!
বর্তমান সংক্রমণের হটস্পট হয়ে উঠেছে মুম্বাই। শুধু মে মাসেই ৯৫টি নতুন করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে, যা মহারাষ্ট্রে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মোট ১৩২টি সংক্রমণের বিশাল একটি অংশ। বর্তমানে মুম্বাইয়ে ১৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি, যার মধ্যে কিছু রোগীকে কেম হাসপাতাল থেকে সেভেন হিলস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে যাতে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে।
পুনেতে মে মাসে এখনো পর্যন্ত একটি মাত্র করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, তবে সতর্কতা হিসেবে নাইডু হাসপাতালে ৫০টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
হরিয়ানা, চেন্নাই, পুদুচেরিতেও বাড়ছে টেনশন
হরিয়ানায় নতুন করে তিনজন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ায় গুরগাঁও ও ফারিদাবাদে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে গুরগাঁওয়ের ৩১ বছর বয়সী এক নারী সম্প্রতি মুম্বাই থেকে ফিরেছেন এবং অপর একজন ৬২ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দার কোনো ভ্রমণের ইতিহাস না থাকলেও সংক্রমিত হয়েছেন।
ফারিদাবাদেও ২৮ বছর বয়সী একজন নিরাপত্তাকর্মীর দেহে করোনা ধরা পড়েছে। তাকে দিল্লির হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চেন্নাই ও পুদুচেরিতেও বাড়ছে সংক্রমণ। পুদুচেরিতে ১২টি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। চেন্নাইয়ে ভাইরাল জ্বরের অধিকাংশই এখন কোভিড বলে জানিয়েছেন ইনফেকশাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ড. সুব্রমনিয়াম স্বামীনাথন।
নতুন ভ্যারিয়েন্টই মূল কারণ!
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন দুটি সাবভ্যারিয়েন্ট OF.7 এবং NB.1.8 যা JN.1 ওমিক্রন লাইনের অংশ—এই নতুন সংক্রমণের পেছনে দায়ী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যারিয়েন্টগুলোর ওপর নজর রাখছে।
বৃদ্ধমান সংক্রমণের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
- নতুন ভ্যারিয়েন্টের উচ্চ সংক্রামকতা
- পুরনো টিকার কম কার্যকারিতা
- জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতার অভাব
- সামাজিক মেলামেশা বৃদ্ধি
- প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার শিথিলতা
*জনসাধারণকে আতঙ্ক নয়, বরং সচেতনতা অবলম্বনের আহ্বান*
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আবারও সাবধান করে দিচ্ছেন—মাস্ক পরা, ভিড় এড়িয়ে চলা, হাত পরিষ্কার রাখা এবং টিকা নেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে।
করোনা হয়তো আগের মতো ভয়ংকর নয়, তবে এটি এখনো বিদ্যমান এবং মৌসুমি ভিত্তিতে বাড়ছে বলে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয় বার্তা:
ভারতের পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্যও সতর্কবার্তা। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে করোনার এমন ঊর্ধ্বগতি আমাদেরকেও প্রস্তুত থাকতে শেখায় হাসপাতাল প্রস্তুতি, ভ্যাকসিন স্টক এবং জনসচেতনতা জোরদার করা এখনই সময়।
মিমিয়া